ভারতের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশটির নির্বাচনে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ভোট যন্ত্র বা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রায় দুই দশক আগে ভারতের নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হলেও এখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল অভিযোগ করছে ইভিএম এ ভোট জালিয়াতির সুযোগ রয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত উত্তরপ্রদেশের ভোটে ইভিএম -এ ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী।
তারপরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং দিল্লির কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনও অভিযোগ করেছেন যে ইভিএম-এ কারচুপি করা সম্ভব।
দিল্লিতে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনে ইভিএম-এর বদলে কাগজের ব্যালট পেপার ব্যবহার করার দাবী তুলছেন মি. কেজরিওয়াল এবং মি. মাকেন।
কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশন আগের মতো আবারও জানিয়েছে, ভোট যন্ত্রে কারচুপি করা সম্ভব নয়। আর দেশের সব ভোটে ইভিএম ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
উত্তরপ্রদেশে যেদিন ভোট গণনা চলছিল, সেদিনই সংবাদ সম্মেলনে মিজ. মায়াবতী অভিযোগ তুলেছিলেন, ইভিএম যন্ত্রগুলিতে বড় ধরণের কারচুপি করা হয়েছে, যার ফলে শুধু বিজেপি’র দিকেই ভোট চলে গেছে।
এমনকি অন্য দলকে ভোট দিলেও সেগুলো বিজেপি’র দিকে চলে গেছে বলে তাদের অভিযোগ।
তারপরেই মি. কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেস নেতা মি. মাকেন ইভিএম-এ কারচুপির প্রসঙ্গ তোলেন।
বিজেপি অবশ্য বলছে, তারা যদি ইভিএম-এ কারচুপি করেই থাকবে তাহলে দিল্লি এবং বিহার বিধানসভা নির্বাচনে গত বছর তারা পরাজিত হলো কেন?
কারচুপি করে সেগুলোতেও তারা জিততে পারত, যুক্তি দিচ্ছে বিজেপি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এর আগে ইভিএম-এ কারচুপি সংক্রান্ত যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলোতে কেউ যন্ত্রে কারচুপির প্রমাণ দিতে পারেন নি।
ভারতের ইভিএম বিশেষজ্ঞ, প্রয়াত পি ভি ইন্দিরেসান কয়েক বছর আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, “যন্ত্রের প্রধান সুবিধা হল এই ব্যবস্থায় জাল ভোট বা ছাপ্পা ভোট দেওয়া যায় না। আগে একই ব্যক্তি পরপর অনেকগুলি ব্যালট পেপারে ছাপ মেরে বাক্সে ফেলে দিতে পারতেন । যন্ত্রে সেই সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি ভোটের মধ্যে আট সেকেন্ডের ব্যবধান থাকতে হবে। যেসব অভিযোগ আসে, সেগুলো নিতান্তই যান্ত্রিক ত্রুটি।”
তবে দক্ষিণ ভারতের এক প্রকৌশলী একটি ইভিএম যন্ত্র যোগাড় করে হাতে কলমে করে দেখিয়েছিলেন কীভাবে তাতে কারচুপি করা যায়।
কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, একটি যন্ত্র কোনও ভাবে যোগাড় করে তাতে কারচুপি করা সম্ভব হলেও ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়ার জন্য বহু সংখ্যক ইভিএম-এ কারচুপি করতে হবে।
আর সেই প্রক্রিয়ায় যতজন নির্বাচনী কর্মকর্তা বা নিরাপত্তারক্ষীকে অংশ নিতে হবে, সেটা গোপনে করা সম্ভব নয়।