ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি

ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, সরকারের চাওয়া অনুযায়ী নতুন পর্ষদ গঠিত হয়েছে। ব্যাংকটিতে আগে লুট হয়েছে। এখন আর এক টাকাও লুট হবে না। পর্ষদ পুনর্গঠনের পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মত দেন। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদে কে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরিচালকরা।
এক প্রশ্নের জবাবে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাওয়ার যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, তা সঠিক নয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের একপর্যায়ে জবাব না দিয়ে তিনি উঠে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে ডেকেছে। এ নিয়ে কথা বলার সময় নেই। আমাকে উঠতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়। পুনর্গঠিত পর্ষদের ৭ পরিচালকের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৬ জন পদত্যাগ করেন। এরপর গত রোববার ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান পরিচালকদের মধ্যে কে শেয়ারহোল্ডার, প্রতিনিধি ও স্বতন্ত্র পরিচালক তা উল্লেখ করেন। এরপর ব্যাংকের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্যে খলিলুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে নতুন পর্ষদ এক হাজার কোটি টাকার মূলধন সরবরাহ করবে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও প্রকল্পের মাধ্যমে আরও তিন হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করা হবে। এর মাধ্যমে চলমান আমানত সংকট নিরসন হবে। এছাড়া যেসব ঋণ খেলাপি হয়েছে তা আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। খারাপ ঋণ আদায়ে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একীভূত না হয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকটির আর্থিক উন্নয়নের চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হবে খেলাপি ঋণ আদায়ে। তিনি বলেন, আপাতত একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটি এক বছর সময় নিয়েছে। তিনি উঠে যাওয়ার পরও সাংবাদিকরা তার পিছু নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘এসব নিয়ে আরেকদিন বলা যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরিচালকদের মধ্যে কে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন–এমন প্রশ্নের জবাব কেউ দেননি। একপর্যায়ে একজন পরিচালক বলেন, কে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি

কোম্পানি সেক্রেটারি তা পরে জানিয়ে দেবেন। নতুন পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল করিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশক্রমে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে এখানে এসেছি। আগামী এক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আগে যারা কাজ করেছেন, এখানে তাদের স্বার্থ ছিল। তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় ব্যাংক দুর্বল হয়ছে। আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে এসেছি। আমাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকার থাকবে খেলাপি ঋণ আদায়ে। এছাড়া উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বাড়ানোর মাধ্যমে আয় বাড়ানো হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৯ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে ডেকে নিয়ে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার উদ্যোগ নিতে বলে। তবে ২৭ এপ্রিল ব্যাংকটির পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়, তারা ইউসিবি কেন, কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না। এ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগ পরিচালক পদত্যাগ করেন। রোববার নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করা হয়। শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান পর্ষদে আছেন। নতুন করে প্রতিনিধি পরিচালক করা হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল করিম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম তফাজ্জল হককে। স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ড. রত্না দত্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবিএম জহুরুল হুদাকে।

samakal