আইএমএফ (আন্তজার্তিক অর্থ তহবিল) বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের আগে সরকারের কাছে শর্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেই তারা ঋণের প্রস্তাব সংস্থার নির্বাহী বোর্ডে নিয়ে যাবে। ওই বোর্ডের অনুমোদনের পর ঋণের অর্থ ছাড় করবে। তবে ইতোমধ্যে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশে তার আলোচনা শেষ হলে তিনি ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে একটি প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভর করেই আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ঋণ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
আইএমএফের আগের মিশনটি ছিল নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করতে পারেনি। এ কারণে আইএমএফ উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা পাঠাচ্ছেন যিনি ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিতে পারবেন।
সূত্র জানায়, এবার ঋণের জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত আরোপ করেছে তার মধ্যে বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেছে সরকার। আরও যেসব শর্ত বাকি রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন ও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকার চায় আইএমএফ। তবে আইএমএফ থেকে অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়া রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা করা হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিকাশে ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার বিষয়ে নিশ্চয়তাও চাইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে ঋণের বিষয়ে আলোচনার সময়ে তারা এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।
জানা গেছে, আইএমএফ ছয় মাস পর পর ঋণের কিস্তি ছাড় করবে। কিস্তির ছাড়ের আগে আইএমএফ সরকারের ওপর নতুন কোনো শর্ত আরোপ করার বিধাণও ঋণ চুক্তিতে থাকে। যে কারণে এক কিস্তির অর্থ ব্যবহারের পর অন্য কিস্তির অর্থ ছাড়ার আগে নতুন শর্ত আরোপ করছে। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে আইএমএফ এসব শর্ত আরোপ করে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ নিয়েছে। কিন্তু পরে পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণে আসার পর আইএমএফের শর্ত মানা থেকে সরে আসে। ফলে পরবর্তী কিস্তি আর নেয় না। এতে আইএমএফও শর্ত বাস্তবায়নে কঠিনভাবে আর চাপ দিতে পারে না।
২০২০ সালে করোনার সময়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার জন্য আইএমএফ থেকে সরকার ৭২ কোটি ডলার ঋণ নেয়। ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড়ের আগে আগের কিস্তির অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তা জানতে চায়। এগুলো জানালে তারা ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড় করবে বলে শর্ত আরোপ করে। কিন্তু সরকার থেকে আইএমএফের ঋণের অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। ফলে আইএমএফও ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড় করেনি।
এবার ওই রকম অভিজ্ঞতা এড়াতে আইএমএফ সতর্ক হয়েছে। যে কারণে তারা ঋণের শর্ত ও সংস্কার চলমান রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায়।