♦ পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে ভাড়া বেশি ♦ অভিযোগ খাবারের দাম ও পরিবহন ভাড়া নিয়েও ♦ কম আসছে বিদেশি ব্যাকপ্যাক ট্যুরিস্ট
শামীম আহমেদ
সম্প্রতি কক্সবাজার ঘুরে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, পর্যটক না থাকায় এখন হোটেল ভাড়া কিছুটা কম। এ জন্যই পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম, তাও দুই বছর পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া। খরচ কম হলে বছরে দুয়েকবার ঘুরতে যাওয়া যেত। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের অধিকাংশ দেশের চেয়ে বাংলাদেশে রাত্রিযাপনে খরচ দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। এখানে কম ভাড়ার হোটেল-মোটেল থাকলেও সেগুলোর পরিচ্ছন্নতা, সেবা ও নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ পর্যটকদেরই। বুকিং.কম ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত কক্সবাজারে দৈনিক ৫ হাজার টাকার নিচে ভাড়ার হোটেল পাওয়া গেছে ৫৭টি। এর মধ্যে গ্রাহকদের রিভিউ অনুযায়ী ৮+ (খুবই ভালো) রেটিং পেয়েছে মাত্র তিনটি, যেগুলোর ভাড়া ৪ হাজারের বেশি। সিলেটে ৫ হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল আছে ৩৩টি। ৮+ রেটিং পেয়েছে ৫টি ও ৯+ (চমৎকার) রেটিং পেয়েছে ৩টি। কম ভাড়ার হোটেলগুলো কক্ষ ভাড়ায় ভালো রেটিং পেলেও স্টাফদের ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা, সুযোগ-সুবিধায় রেটিং নামমাত্র। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৫ হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল আছে ১ হাজার ২৭০টি। ৯+ রেটিং পেয়েছে ১১৪টি, ৮+ রেটিং পেয়েছে ৫৬৪টি। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৫ হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল রয়েছে ২ হাজার ২৪৪টি। ৯+ রেটিং পেয়েছে ৫৫৮টি, ৮+ রেটিং পেয়েছে ১ হাজার ৩১৩টি। সেখানে ৬০০ টাকার কম ভাড়ায় দুজন থাকার কক্ষও রয়েছে। ভারতের কলকাতায় ৫ হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল রয়েছে ৪২৮টি। এর মধ্যে ৯+ রেটিং পেয়েছে ৩৮টি ও ৮+ রেটিং পেয়েছে ৮৯টি। দার্জিলিংয়ে ৫ হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল আছে ২৬৭টি। ৯+ রেটিং পেয়েছে ৭৭টি ও ৮+ রেটিং পেয়েছে ১০৮টি। নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়াতেও চিত্র একই রকম। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর পরিচালক (অর্থ) মনিরুজ্জামান মাসুম বলেন, এখানে একটা পাঁচ তারকা হোটেলে এক রাত থাকতেই ১৫০ থেকে ৩০০ ডলার গুনতে হয়। ডিনার করতে চলে যায় ৫ হাজার টাকা। ট্রান্সপোর্ট, দর্শনীয় স্থানে ঘোরা সব মিলে দুই রাত তিন দিনে ৬০০ থেকে দেড় হাজার ডলার খরচ হয়। একই সেবা পেতে থাইল্যান্ডে খরচ হয় অর্ধেক। শুধু হোটেল খরচ কমলে পর্যটনে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সহজ হতো। কিন্তু, গার্মেন্ট বায়ার ছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলে গ্রাহকই নেই। ৬০ ভাগ কক্ষই খালি থাকে। এই ঘাটতি তারা সেবার দাম বাড়িয়ে পূরণ করে। পর্যটক টানতে পারলে সংকট কাটত।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেল ইলাফ ইন্টারন্যাশনালের জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আমিন ভারত ও থাইল্যান্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো নানা উপকরণ আছে। শুধু স্পা করা বা কেনাকাটার জন্য অনেক পর্যটক সারা পৃথিবী থেকে থাইল্যান্ড যায়। সারা বছর পর্যটক থাকে। তাই তারা হোটেল ভাড়া বা অন্যান্য খরচ কমাতে পারে। কক্সবাজারে শুধু সাগর দেখা ছাড়া বিনোদনের কিছু নেই। শীতকালে সমুদ্র ঠাণ্ডা থাকায় মূলত তিন মাস পর্যটকের চাপ বাড়ে। বাকি নয় মাস হোটেলের ৭৫ ভাগ কক্ষই ফাঁকা থাকে। কিন্তু, হোটেলের স্টাফ বা অন্যান্য খরচ কমানো যায় না। তাই ওই তিন মাস মূলত হোটেলগুলো ব্যবসা করে। সারা বছর পর্যটক থাকলে হোটেল ভাড়া কমত। দুই যুগ ধরে ব্যবসায়িক পর্যটন নিয়ে কাজ করা বেঙ্গল লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রফিকুল ইসলাম নাছিম বলেন, বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দুর্বল পর্যটন ব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ব্যয় ও পর্যটকের চাহিদা অনুযায়ী ট্যুরিস্টিক কর্মকাণ্ডের অভাবে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠতে পারেনি। বিশ্বে ব্যাকপ্যাক পর্যটকই ৭৫ ভাগ। যারা কিছুটা সময় ও অর্থ হাতে আসলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। এই জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। অনেক টাকা খরচ করে হোটেলে ঘুমানোর জন্য তারা বের হয় না, নতুন কিছু দেখতে ও জানতে বিভিন্ন দেশ চষে বেড়ায়। অতিরিক্ত খরচ, রেল বা ভালো যোগাযোগের অভাব ও পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা না থাকায় এখানে ব্যাকপ্যাক ট্যুরিস্ট নেই বললে চলে।