- আফফান উসামা
- ২৩ জুলাই ২০২২, ০৬:৩৩
প্রচলিত প্রবাদ বাক্যের মতো মুখে মুখে যেন ছড়িয়ে গেছে, ক্রিকেটের ‘ক’ না বুঝা ব্যক্তিটাও পাড়ার কোনের চা ষ্টলে বসে অনর্গল বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে, ‘সোহান তো ব্যাটই ধরতে পারে না, সে অধিনায়ক হলো কি করে?’ বিষয়টা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘তোমার কথাই ঠিক, কিন্তু তালগাছ আমার!’
‘মাথায় মাথায় টক্কর খেলে শিং গজাবে কপালে কিংবা ফলের বিচি পেটে গেলে, গাছ হবে তাতে।’ রটিয়ে থাকা এমন নানান প্রবাদ বচনের সর্বশেষ সংযোজন যেন ‘সোহান কিপিংয়ে সেরা, কিন্তু ব্যাটিং পারে না।’ একটা সময় তা মানা যেতো, তবে সময়ের সাথে সাথে সোহান এখন ভিন্ন পরিচয়, বৈচিত্র্যময়। এই সোহান গত অর্ধযুগে নিজেকে কতটা বদলেছেন তা পরিসংখ্যানই আপনাকে বলে দেবে।
যাহোক, টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর না হলেও ওয়ানডে আর টেস্টে সাবলীল ছিলেন বরাবরই। এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন। তার মাঝে একটি ম্যাচে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পাননি। বাকি পাঁচ ম্যাচে করেছেন মোট ১৬৫ রান। সর্বোচ্চ ৪৫ রান। পাঁচ ইনিংসে তার এভারেজ স্ট্রাইক রেট ৯৪.৮২। স্ট্রাইকরেট ৮২.৫০। বলতে পারেন এই আর তেমন কি? তবে শুনুন, এই পাঁচ ইনিংসের তিনটিতেই তিনি অপরাজিত ছিলেন। আর এই পাঁচ ইনিংসে তার ব্যাটিং পজিশন ছিল দু’বার ছয় এবং সাত নম্বরে এবং একবার আট নাম্বারে। পাঁচ ইনিংসে ১০০+ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন দু’বার। ৭০ স্ট্রাইক রেটের নিচে ব্যাট করেননি কোনো ম্যাচেই।
শুধু কি জাতীয় দলেই? ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও সোহান যেন অপ্রতিরোধ্য এক যোদ্ধা ঘোড়ার নাম। যে ক্লান্ত হয় না, দমে যায় না। ছুটে চলে শিরোপার দোরগোড়ায়। এইতো শেষবার যেমন শেখ জামাল ছিলো তাঁর ঘোড়সওয়ার। আর তিনি সর্বোচ্চ প্রায় ৯৭ গড়ে ৮ ম্যাচে ৮৭ স্ট্রাইকরেটে করেন ৪৮৩ রান। তবুও আফসোস তিনি করতেই পারেন, শুরুর ৫টা ম্যাচও যদি তিনি খেলতে পারতেন! ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টিতেও সাহসী তিনি, যদিও গত বিপিএলটা ভালো যায়নি। তবে ভরসা রাখা যায়।
ফুটবল একটা সময় আমাদের দেশে কতটা জনপ্রিয়তা আর উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিলো তা বুঝাতে হয়তো হালের জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের বাবা’রা খানিকটা হলেও ভূমিকা রাখবেন৷ সাকিবের বাবার কথা তো সবাই জানেন, ফুটবলার থেকে ফুটবল কোচ আর সংগঠকও ছিলেন। মাশরাফীর বাবাও কম কিসে, সাকিবের বাবার বন্ধু হিসেবে তিনিও চলেছেন একই পথে। তেমনি কাজী নাসিবুল হাসান সান্নুও ছিলেন সেই পথেরই পথিক। তার ছেলে নুরুল হাসান সোহানও তো জাতীয় দলে খেলে!
কাজী নাসিবুল হাসান সান্নু ফুটবলার ছিলেন বটে, কিন্তু জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য হয়নি। সান্নু খুলনার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের সেরা গোলরক্ষক ছিলেন। তখন আরামবাগের গোলরক্ষক হিসেবে বেশ নাম-ডাক ছিল সান্নুর। কিন্তু লাল-সবুজের এই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ মেলেনি তার। ফলে এই ব্যর্থতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো, ব্যথা দিচ্ছিলো সময়ে সময়ে। কিন্তু বাবার সেই অপূর্ণতা প্রাপ্তির স্রোতে ধুয়ে দিয়েছে ছেলে। ছেলে তার লাল-সবুজের ওই জার্সি গায়ে ৫৭ হাজার বর্গমাইলের এই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। আর আজ তো পতাকাটাও উঠে গেলো তার হাতে। আর কয়েকটি দিন পরেই স্বপ্ন পূরণ হবে ‘অধিনায়ক’ ডাকে!
টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন তিনি। হয়তো সাময়িক, তবে স্বপ্ন যে পূরণ হয়েছে তা বলা যায় নিঃসন্দেহে। তবে তার অধিনায়কত্বে যে সব বদলে যাবে বিষয়টা তেমন নয়। অধিনায়কত্ব বদলালেই কি ছেড়ে যাবে দুঃসময়? যদি তাই হতো, তবে সাকিবের অধিনায়কত্বেও কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে টেস্টে হারতে হলো! তাকে অধিনায়কত্ব করার উদ্দেশ্য পরিস্কার। শুধুই তার সাহসটা পরখ করা। জিম্বাবুয়ে সিরিজেও যদি আমরা পরখ করতে না পাই, তবে কি করে সইবেন এই ব্যর্থতা! তরুণ নেতৃত্ব ছিলো সময়ের দাবি। মাহমুদউল্লাহর ব্যর্থতায় আর সাকিবের অনুপস্থিতিতে সোহানেই ভরসা রেখেছে দল। কারণ, হারুক, জিতুক; সোহানের মাঝে আছে এক জয়ের তাড়না! এই তাড়নাই শক্তি হতে পারে তার।
হাতি-ঘোড়াও তো নেতৃত্বে ছিল, কিইবা আর এলো গেল। ব্যর্থতার স্রোতে তো তারাও ভেসে গেল। সোহানকে অধিনায়কত্ব এনে দেয়া খালেদ মাহমুদ সুজনও বলছেন, ‘অধিনায়ক সোহান মানেই নতুন দিনের সূচনা নয়, বরং যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবেই সোহানের অধিনায়কত্ব পাওয়া।’ আশারাখি এই যাচাই-বাছাই আমাদের জন্য শুভ কিছু নিয়ে আসবে৷ অজি অধিনায়ক টিম পেইন যেমনটা নিয়ে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য। সুতরাং, আশা রাখি, বিশ্বাস করি…