সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে

এম সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের কলকাতায় খুনের নেপথ্যে চোরাচালানের অভিযোগ এসেছে। এসব ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক এই পুলিশপ্রধানের যে পরিমাণ সম্পদের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা অকল্পনীয়। এত সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন সরকারি একজন কর্মকর্তা! তিনি তো অবসরের পর এই সম্পদ করেননি, চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই করেছেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তার মানে কি কর্তৃপক্ষ চোখ বন্ধ করে ছিল? তিনি (বেনজীর আহমেদ) সরকারকে ব্যবহার করে এসব করেছেন। সরকারও তাঁকে ব্যবহার করেছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের সংশ্লিষ্ট আইনের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায়। সেই ধারায় ‘ক্লেপ্টোক্র্যাসি’ শব্দটি রয়েছে। এর মানে হচ্ছে, রাজনীতিতে ও সমাজে দুর্নীতির সুবিধা আছে। এর সুবিধা নিয়ে তিনি দুর্নীতিগ্রস্তদের অংশীদার হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা যখন সাবেক এই সেনাপ্রধানকে ঘিরে তথ্যচিত্র প্রচার করেছিল, সে সময় ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরিস্থিতি এত দূর যেত না বলে মনে হয়। এখন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর তাঁর সমালোচনা করলেই চলবে না। ঘটনার দায় সরকারকেও নিতে হবে। তবে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে তাঁরা ছিলেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় নেই। কারণ, তাঁরা যখন শীর্ষ পদে ছিলেন, তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেছেন। ফলে ঘটনাগুলো তাঁদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের কলকাতায় খুন হওয়ার ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগ এসেছে। আসলে দেশের রাজনীতিতে সংসদ সদস্যের পদ লোভনীয় করে ফেলার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। একক কোনো দলের কথা বলব না। এ ব্যাপারে সব দলের দায় রয়েছে। কারণ, কাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তা যাচাই–বাছাই কতটা করা হচ্ছে—এই প্রশ্ন করতেই হয়।

শুধু জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়ার যে কথা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেটা যৌক্তিক নয়। এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, মনে হয়, সব রাজনৈতিক দলই দেউলিয়া হয়ে গেছে। দলগুলো নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে নৈতিকতার বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছে না। সে কারণে সংসদ সদস্যের খুনের ঘটনায় চোরাচালানের মতো অপরাধের অভিযোগ উঠছে—এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এখানে সবার দায় রয়েছে।

এসব ঘটনায় সরকার, দেশ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমি মনে করি। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

prothom alo