অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১৮ ঘন্টা আগে) ২৪ মে ২০২৩, বুধবার, ২:৪৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, দেশের জিডিপি যদি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে সম্পদ কর ০.৪ শতাংশ বাড়ার কথা। আর যদি জিডিপি ৬ শতাংশ ও মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ হিসাবে যোগ করে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করি, তাহলে সম্পদ কর ৬ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সেটা আমরা পাইনি। উন্নয়নশীল দেশ বিবেচনায় আফ্রিকার সম্পদ কর ০.৩ শতাংশ, আমরা সেখান থেকেও পিছিয়ে আছি। অথচ আমাদের দেশের আয় অফ্রিকার দেশেগুলোর চেয়ে বেশি। ফলস্বরূপ, সামাজিক বৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘স্টেট অ্যান্ড স্কোপ অব প্রপার্টি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে দেবপ্রিয় এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডি’র গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মতো সম্পদ কর বাড়েনি। এর ফলে বাংলাদেশ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ কর হারাচ্ছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি কমাতে কর-জিডিপির অনুপাত আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিপিডি। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের জন্য নতুন নতুন খাত সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা।
আলোচনায় বক্তারা জমিটি পতিত না রেখে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। যদি তা না হয়, তবে তারা এই ধরনের জমিতে প্রযোজ্য করের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বক্তারা বলেন, গত এক দশক ধরে কর-জিডিপির অনুপাত ৭-৮ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে এই অনুপাত আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কর ফাঁকি, করের আওতা বৃদ্ধি করতে না পারা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার কারণে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না।
সিপিডির গবেষণা বলছে, দেশের রাজস্ব আয়ের ৫৫ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। গত ৫ বছর প্রত্যক্ষ কর ৩৩ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। সম্পদ থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। তাই প্রত্যক্ষ কর আদায়ের জন্য নতুন নতুন খাত সন্ধান করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ করতেও রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রয়োজন। এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্যে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দেশে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ কর মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। এর বড় অংশ ভূমি উন্নয়ন কর। প্রত্যক্ষ কর না বাড়ার কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে। বাংলাদেশে আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। একটি প্রজন্ম সম্পদ আয় করে ও পরবর্তী প্রজন্ম তা ভোগ করে। তাই সেখানে সম্পদের বৈষম্য হ্রাস করে ন্যায্যতা নিয়ে আসতে হবে। ওই বৈষম্য হ্রাস ও রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশে উত্তরাধিকার কর প্রচলন অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, তিন ধরনের সম্পদ কর নিয়ে কাজ করেছি। একটি হলো প্রত্যক্ষ সম্পদ কর, হোল্ডিং কর ও উত্তরাধিকার কর। বাংলাদেশে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ, একইসঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। কিন্তু দেখার বিষয় আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। আয় বৈষম্য ১.৪ শতাংশ বেড়ে থাকলে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সম্পদের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে ও বৈষম্য কয়েকগুণ হারে বাড়ছে।
দ্রেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ ৫ ধরনের ট্যাক্স চলমান রয়েছে- ভূমি উন্নয়ন কর, ওয়েলথ সারচার্জ, হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও গিফট ট্যাক্স। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি যখন নিজেদের মধ্যে দান বা হেবা হয়, সেখানে কোনো ট্যাক্স নেই। আমরা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। শুধুমাত্র উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে সরকার যখন নিজে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেন, যেমন- ইকোনমিক জোন কিংবা বড় কোনো প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ করে। তখন তারা ট্যাক্স দেয় না। এখানে সরকার ব্যক্তি খাতের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আবার সম্পদ সারচার্জ ৩৫ শতাংশ রয়েছে। এটাকেও আমরা উচ্চ মনে করছি। ট্যাক্স সিস্টেমের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যেও বৈষম্য রয়েছে। দেশের ভেতরে সম্পদ যেভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যেভাবে আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। ন্যায্যতা ও বৈষম্য হ্রাসে সম্পদ করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সম্পদ করের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। জমি ও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কর আরোপ হচ্ছে না। এখানে বৈষম্য রয়েছে। জমির ওপর বিনিয়োগ বাড়ছে, কারণ জমির দাম অস্বাভাবিকহারে দাম বাড়ছে। এটার বড় কারণ এই বিনিয়োগে বড় ধরনের কর দিতে হয় না।