রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে ‘জঞ্জাল’ আখ্যায়িত করে সংবিধান থেকে বাতিলের আহ্বান রাশেদ খান মেননের

 আমার দেশ
৮ এপ্রিল ২০২৩

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাশেদ খান মেনন

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাশেদ খান মেনন

নিজস্ব প্রতিনিধি

রাষ্ট্রধর্মকে সংবিধানের জঞ্জাল উল্লেখ করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাশেদ খান মেনন বলেন, ইতোমধ্যে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমেছে তা এখনো দূর করা যায়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চার মূল নীতিমালা ফিরিয়ে আনলেও এই জঞ্জালগুলো দূর না করলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।

শনিবার (৮ই এপ্রিল) ফ্যাসিবাদীদের দ্বারা গঠিত সংসদের বিশেষ অধিবেশনে শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার যে সংজ্ঞা রয়েছে তা ভঙ্গ করে কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু তাদের মধ্যে অসন্তোষ দূর হয়নি। তাদের আদিবাসী হিসেবে নয়, নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সংসদ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল। তবে এই পার্লামেন্ট কখনো মসৃণ ছিল না। এই সংসদ কখনো আঘাত এসেছে, বাতিল হয়েছে, সংসদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে খন্দকার মোস্তাক স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে তার সরকারকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে সংবিধান পাল্টে দেন, অধিকার ক্ষুণ্ণ করেন।

তিনি বলেন, আমরা জানি ওঝার মৃত্যু সাপে হয়, তাই হয়েছিল। তার পরে আরেক সেনা প্রধান ক্ষমতায় এসে বলেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানে সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সেদিন (১৯৯১ সালে) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হুমকি দিয়েছিলেন, দলগুলো রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন। বিএনপি শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টারি পার্টিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটা ছিল পঞ্চম সংশোধনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। তবে সেদিন আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীয় ভার, আরেকটি ছিল ৭০ বিধির প্রস্তাব বাতিল করতে পারিনি। সংবিধানের চার গণ্ডিতে প্রত্যাবর্তন করতে ব্যর্থ হই। তার বদলে বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহিত করে, ধর্মের নামে সহিংসতা চালু করা হয়। বিএনপি আজকে নতুন করে নিরপেক্ষ সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে। ২০০১ এ ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে কীভাবে পালাবদল হয়।

মেনন বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখছি আমাদের পার্লামেন্টের মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এখানে এক ঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে ৩ মিনিট মাত্র গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা হয়। বাকি কথা হয় দলের নেতার কথা, নিজের কথা। এর বাইরে সংসদ এগুতে পারছে না। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সংসদে এমন অবস্থা হয়েছে এখানে আইনজীবী না থাকার কারণে ভবিষ্যতে আইন প্রণয়ন করতে আইন প্রণেতাদের বাইরে থেকে আনতে হবে। আজকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাণিজ্যায়ণর ফলে সংসদের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে, নতুন চেহারা দাঁড়িয়েছে। আজকে ব্যবসায়ীর সংখ্যা সংসদে অনেক বেশি। ফলে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়লে তাদের স্বার্থে সংসদের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আজকে প্রয়োজন সংসদের সংস্কার করা। সংবিধান পর্যালোচনার প্রয়োজন। আজকে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মান ও গুণসম্পন্ন সংসদ গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজকে বৈষম্যের পাহাড় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই এই সংসদে।