জাপার প্রার্থী হতে চান না কেউ

জাপার প্রার্থী হতে চান না কেউ 

 

প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলার মাত্র দুটিতে লাঙ্গলের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হবে ১৬১ উপজেলায়, এর তিনটির জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে পেরেছে জাপা। ৯ শতাধিক ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ার জন্য জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী মাত্র দু’জন।
দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ভুল রাজনীতির কারণে ভোটের মাঠে লাঙ্গলের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। জাপার মনোনয়নে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া দূরে থাক, জামানত রক্ষা করাই কঠিন। তাই নির্বাচন করে টাকা নষ্ট করতে চান না কেউ। তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ নেই নেতাদের। তারা দেখেছেন, ক্ষমতাসীন দল কীভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে, কীভাবে ফল ছিনিয়ে নেয়। তাই অন্য দলের নেতারা নির্বাচন করে টাকা-পয়সা নষ্ট করতে চান না।’

জাপার দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে নরসিংদীর পলাশ ও রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লাঙ্গলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ি সদর, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে পেরেছে জাপা।

জাপার দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, কিশোরগঞ্জের তারাইল উপজেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দু-এক দিনের মধ্যে মনোনয়ন ফরম নেবেন। এ ছাড়া রংপুর সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে মোট সাতটি ফরম বিক্রি হয়েছে।

তারাইল ও করিমগঞ্জ উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন। এ আসনে টানা চারবারের এমপি জাপার মহাসচিব। গত নির্বাচনে যে দুই উপজেলায় জাপা প্রার্থী জয়ী হন, তার একটি তারাইল। এখানকার বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম ভূঞা এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। করিমগঞ্জেও জাপা প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন মুজিবুল হক চুন্নু।

গত ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জয়ী হয়েছে জাপা। ভোট পেয়েছে ৪ শতাংশ, যা দলটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন। ছাড়ের ২৬ আসনের ৯টিতে জামানত হারিয়েছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনের বাইরেও ২৩৯টিতে জাপার প্রার্থী ছিল। সেগুলোয় চারজন বাদে সবাই জামানত হারান।

সংসদ নির্বাচনের পর গত ৯ মার্চ দুই সিটি করপোরেশন, ৯ পৌরসভা এবং ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মাত্র দুটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছিল জাপা। কিন্তু সেখানেও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও নির্বাচনে যাচ্ছে না। বড় দল হিসেবে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপা দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। কিন্তু লাঙ্গলের প্রার্থী হতে কারও আগ্রহ না থাকায় নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ সংসদীয় আসন। টানা ১৫ বছর আসনটি ছিল জাপার দখলে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন। এখানেও এবার লাঙ্গলের প্রার্থী নেই। জাপার প্রার্থী হতে কেউ আগ্রহও দেখাননি। এককালে জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল রংপুর। জেলার কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাঙ্গলের প্রার্থী থাকছে না। দলটির কোনো নেতাই প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভোটের মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জাপা। তবে তা মানতে নারাজ মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি দাবি করেন, সব উপজেলার জয়ী হওয়ার অবস্থা না থাকলেও অনেক জায়গায় জাপা এখনও শক্তিশালী। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভোট ব্যাংক থাকলেও অনেকে প্রার্থী হচ্ছেন না।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছে। নিজেদের মূলধারা হিসেবে দাবি করলেও এই অংশের নিবন্ধন নেই। দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করলেও রওশনের জাপার কেউ নেই উপজেলা নির্বাচনে।

সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here