17 September 2021 Facebook entry
জিয়াউর রহমান দিল্লির আগ্রাসন ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে আছেন। বাঙালি জাতিবাদী রাজনীতি তাকে অনর্গল অস্বীকারের মধ্য দিয়ে অনর্থক বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে বিভাজন টিকিয়ে রাখতে চাইছে সেটা আগেও সম্ভব হয় নি, এখনও হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু চেষ্টা চলবে। তবে সম্প্রতি জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করে তোলার পেছনে আওয়ামী লীগ কী রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করতে চায় সেটা স্পষ্ট না। বিএনপি কোন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে হাজির নাই। সেই কারণে বলা যায় জিয়া বিদ্বেষ ও প্রপাগাণ্ডার প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর গৌরব ও অবদান অস্বীকার করা। বাংলাদেশে সৈনিকদের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা অস্বীকার করার চেষ্টা নতুন কিছু না।
সেই অবদানের দিক থেকে ‘মেজর জিয়া’ বাংলাদেশের জনগণের গণচেতনায় হাজির আছেন। তার রাজনৈতিক ভূমিকার সমালোচনা/পর্যালোচনা হতেই পারে। কিন্তু জিয়া এবং তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে সকল সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলে্ন তাঁদের পরিকল্পিত ভাবে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা কার্যত একাত্তরকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার নামান্তর। আদালতের রায় দিয়ে যেমন ইতিহাস লেখা হয় না, তেমনি ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট ধরণের আইন বানিয়েও ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট এবং তাদের ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।
এটি আমার পুরানা একটি পোস্ট। আওয়ামী লীগকে মনে করিয়ে দেবার জন্য। আমরা ইতিহাস পড়ি। প্রমাণ, সাক্ষ্য ও দলিলও সংরক্ষণ করি। বিএনপির জন্য এটা শাপে বর হচ্ছে, বলা চলে। আওয়ামী লীগের জন্য এটা বুমেরাং হতে পারে। কারন প্রপাগাণ্ডা যেমন ইতিহাস বদলাতে পারে না, তেমনি সাধারণ মানুষের বোধ ও বুদ্ধিও সবসময় অসচেতন থাকে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল-অধিবেশন ১৯৭২ সন। তারিখ ৭-৮ এপ্রিল ১৯৭২। বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের সাধারন সম্পাদক তাজুদ্দীন আহমদের রিপোর্ট।
সেখানে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগের নেত্রীবৃন্দের পরামর্শক্রমে চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগ্রামরত মেজর জিয়াউর রহমান বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন এবং বাংলাদেশে গণহত্যা রোধ করতে সারা পৃথিবীর সাহায্য কামনা করেন।”
সেই রিপোর্টের প্রথম পাতার একটি ছবি ও পাশে রিপোর্টের কিয়দাংশ ভার্চুয়াল জগতে বিচরন করছে। কারা আপলোড করেছেন জানি না। আমার এক সহৃদয় বন্ধুর সহায়তায় সেটা সংগ্রহ করেছি। যারা পাতাটি আপলোড করেছেন, আশা করছি মূল রিপোর্টটি তাঁদের কাছে আছে। যদি থাকে তার পিডিএফ কপি শেয়ার করলে আমার ধারণা ইতিহাসের অনেক তর্কের মীমাংসা হবে। বলছি কারন ডান দিকের পাতার লেখা নতুন করে টাইপ করা। মূল রিপোর্টটি সকলের পড়া দরকার।
ব্যাক্তিগত ভাবে এটা আমার কাছে বড় কোন ইস্যুই না। কারন শেখ মুজিবর রহমান বা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক কিম্বা কে না তার সঙ্গে তাঁদের ঐতিহাসিক অবদানের সম্পর্ক সামান্যই। এর বাইরে তাঁদের জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ভালমন্দ নির্ণয় করেছে বিপুল ভাবে। তাদের অবদান যেমন কারো পক্ষে অস্বীকার অসম্ভব, তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য উভয়েরই দায়ও কোন অংশেই কম না। ঘোষক প্রমাণিত হলে সেটা কমে না। আমরা এখন যেখানে আছি সেটাই তাঁদের ভূমিকা ও বাংলাদেশের ইতিহাসের পরিণতি। সেটা খুব মধুর নয়। এটা মেনে নিয়েই আমাদের এখনকার সমস্যার সমাধান, এবং আগামির কথা ভাবতে হবে।
ইতিহাসে ব্যাক্তির ভূমিকার মূল্যায়ন দরকার। কিন্তু ব্যাক্তিকে বিশালতা দিতে গিয়ে জনগণকে যখন গৌণ করা হয়, এমনকি সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয় সেই রাজনীতি – যে পক্ষ থেকেই আসুক – নাকচ করাই সামনে এগিয়ে যাবার পথ। ব্যাক্তির প্রতি আবেগ যখন বর্তমানকে ক্রমাগত নস্যাৎ করে ও ভবিষ্যতের পথ আগলে দাঁড়ায় – তখন তাদের অন্ধ অনুসারী ও সমর্থকরা সমাজ ও রাজনীতির জন্য বোঝা হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য সেটা প্রবল বাধা হিসাবে হাজির হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কার কি ভুমিকা তা যথাসম্ভব সঠিক ভাবে জানা জরুরী। যার যা প্রাপ্য তা বুঝিয়ে না দিলে ইতিহাস শেকলের মতো পা জড়িয়ে ধরে। চলা অসম্ভব হয়। সেটা করা এবং একই সঙ্গে নির্বিচার আবেগী রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই এখনকার বাংলাদেশে সঠিক রাজনীতি।
স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছেন এটা ৪৩ বছর পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির তর্ক হতে পারে, বাংলাদেশের জনগণের এখনকার সমস্যার সমাধান কিম্বা ভবিষ্যতের দিক নির্ণয়ের এটা কোন তর্ক না। এ তর্ক আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে না, পেছনে টেনে ধরতে চায়। যে তর্কের মীমাংসার জন্য ঐতিহাসিক তথ্য, প্রমাণ বা দলিল নয়, আদালতকে টেনে আনতে হয় সেই তর্ক বিচার ব্যবস্থাকেও নস্যাৎ করে।
আফসোশ। আমরা এমনই এক আত্মঘাতী জনগোষ্ঠি ।