গণপিটুনির বিচার দাবিতে মধুখালীতে ঢাকা-খুলনা সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

মধুখালীতে ঢাকা-খুলনা সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ 

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গণপিটুনিতে দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ৫ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালীর ধুমবাগাট বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ঢাকা খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল। বিকল্প পথে অনেক যানবাহন চলাচল করছে।

মহাসড়ক থেকে লোকজনদের সরাতে পুলিশ টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এতে ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এরপর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশের রায়ট কার মোতায়ন রয়েছে। অবরোধকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন বলেন, ডুমাইনের পঞ্চপল্লীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুখালী উপজেলার পাইলট স্কুল থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়েছে। কোথাও বুঝিয়ে-শুনিয়ে, কোথাও টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ কারণে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে বাঘাটা এলাকার ঈদগাহ মাঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ‌‘সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়। এতে পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবি জানান তারা। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক দিয়ে ডুমাইনের পঞ্চপল্লী এলাকার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাগান বাজার এলাকায় বাধা দেয়। এ সময় লোকজন একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, কামারখালী ব্রিজের কাছে মাঝিবাড়ি ও বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসে। সেখানে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। তারা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)। ওই দিন সন্ধ্যায় তাদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে তাদের মেঝেতে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করা হয়। এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।

খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে যান। প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান।

samakal