এই রাজনৈতিক অবস্থায় বিএনপি কোনোমতেই নির্বাচনে যাবে না: ফখরুল

Prothom Alo

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পরিসরকে একেবারে সংকীর্ণ করে ফেলছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এখানে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্মূল করার একটা নীলনকশা তারা করেছে। তিনি বলেন, এর ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে সরকার একতরফা নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণের মতামত বাতিল করে একটা প্রতিনিধিত্বহীন সংসদ গঠন করেছে, যার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সহিংসতা সৃষ্টি করছে সরকার, তাদের লোকজন এবং পুলিশ। সেখানে তারা মামলা দিচ্ছে বিএনপি নামে। একইভাবে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সরকারের চিরাচরিত ধারণা বা ভীতি যে বিএনপিকে কোনোমতেই নির্বাচনের কাছে আসতে দেওয়া যাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনের আশপাশে আসতে দিলেই তারা জানে যে সামনের নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় আমরা কোনোমতেই নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর উত্তরের দিকে এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ বিএনপি চেয়ারপারসন রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসা থেকে দলটির একাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তিনি বলেন, ২৬ অক্টোবরে ভাটারায় বিএনপির কর্মী সভায় পুলিশের হামলা হয়, ২৩ অক্টোবর উত্তরখানে বিএনপির কর্মিসভা পণ্ড হয় পুলিশি বাধায়, ১২ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানার বিএনপির নেতার বাসায় ফরম বিতরণের সময় পুলিশ হামলা করে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

‘গণতন্ত্র দেওয়ার তারা কে?’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন গণতন্ত্র তারা না দিলে আমরা নাকি সমালোচনা করতে পারতাম না। গণতন্ত্র দেওয়ার তারা কে? অধিকার আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের জন্য আমরা আরও লড়াই করেছি।

আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিরকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য বারবার বিএনপিকে ধ্বংস, নির্মূলের জন্য, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার হত্যা সবকিছু করছে। এটাকে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবেই না, এটা ভয়ংকরভাবে একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা। হিটলার-মুসোলিনিরাও ফ্যাসিস্ট, তারা এভাবেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ভোটের অধিকার হরণ করেছে।’

মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এটা বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দিয়েছে।
অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষের ন্যূনতম অধিকার নেই। মিলাদ করা তো একটা ধর্মীয় অধিকার। এই ধর্মানুষ্ঠান করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। সংবিধান অধিকার দিয়েছে সভা করতে মিছিল করতে। সাংবিধানিক অধিকার সরকার হরণ করে নিচ্ছে। অর্থাৎ এই সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার অর্জনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
‘মিলাদ কী নিষিদ্ধ?’

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব, তেজগাঁও মহানগরীর নেতা কর্মীরাসহ আমরা শাহীনবাগে বাদ যোহর মিলাদে অংশ নেই। মিলাদ শেষে গুম হওয়া বিএনপির ছাত্রনেতা সাজেদুল ইসলাম এর অসুস্থ মাকে আমরা দেখতে যাই। সে সময় সুমনের বাড়ি চারদিকে শতাধিক ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে অর্ধ শতাধিক পুলিশ ঘিরে ফেলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দরজা খুলে ঢুকে পুলিশ বেধড়ক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মারধর, আক্রমণ এবং গ্রেপ্তার করে। আমরা প্রতিবাদ করি কেন করছেন আমরা তো মিলাদে এসেছি । অসুস্থ মাকে দেখতে এসেছি কিন্তু কোনো কথায় তারা মানবে না। ওসি অপূর্বের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে।’

আমান উল্লাহ আমানের অভিযোগ, ‘প্রায় ১৫ জন নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই গ্রেপ্তার কেন আমাদের কি গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। আমরা কি মিলাদ করতে পারব না, এটা কি নিষিদ্ধ? ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণে কোথাও বিএনপি নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না।’