ক্রমেই জোরদার হচ্ছে ইন্ডিয়া আউট ক্যম্পেইন। ৭ জানুয়ারীর বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভারতের একপেশে সমর্থন এবং অভ্যন্তরীন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযেগ মাধ্যমে ভারতীয় পন্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। শুরুতে এই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা থাকলেও সময় যত গড়াচ্ছে ইন্ডিয়া আউট ক্যম্পেইনের পালে ততই হাওয়া লাগছে। প্রথমে এ আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমিত থাকলেও এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রাজপথে নামছে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি নিয়ে।
সম্প্রতি ঢাকায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি প- করতে পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিলো বেশ চোখে পড়ার মতোই। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পর পর দুই দিন এই কর্মসূচি প- করে দিয়েছে পুলিশ।
গণঅধিকার পরিষদের একটি অংশের কর্মীরা রাজধানী ঢাকার বাইরে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভাগীয় শহরগুলোতেও ধারবাহিক ভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে। দলটির ওই অংশের নেতা কর্নেল (অবঃ) মিয়া মশিউজ্জামান, ফারুক হোসেন এবং তারেক রহমান কর্মীদের নিয়ে পাড়া মহল্লায় মানুষের মধ্যে প্রচারপত্রও বিতরণ করছেন। মধ্য ফেব্রুয়ারী থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে এই দলটির বেশ কয়েক দফা ধস্তাধস্তিও হতে দেখা গেছে। সেই বাঁধা উপেক্ষা করেই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান।
দলটির অপর অংশের নেতা ডাকসু’র সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরও তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। টি-সার্ট বিতরণ থেকে শুরু করে প্রচারপত্র এবং র্যালির মতো কর্মসূচিও চালাচ্ছেন নূরুল হক নূরের নেতৃত্বধীন গণঅধিকার পরিষদ।
বিরোধী রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদেরও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সভা সমাবেশে ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে এই প্ল্যটফর্মের নেতা ডাকসু’র সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, জুনায়েদ সাকী, হাসনাত কাইউমসহ শীর্ষ নেতারা ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করছেন। তারাও কৌশলে সাধারণ মানুষকে ভারত বর্জনে উৎসাহিত করছেন।
এছাড়া ১২ দলীয় জোট ফেব্রুয়ারীর ১০ তারিখের পর রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৪টি সমাবেশ করেছে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি নিয়ে। এই জোটের শীর্ষ নেতা এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপা’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাশেদ প্রধান এবং কল্যান পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবু হানিফের নেতৃত্বে এসব কর্মসূচি পুলিশ দুই দিন পন্ড করে। পুলিশের সাথে তাদের হাতাহাতিও হয়েছে। পুলিশকে তাদের ব্যনারও কেড়ে নিতে দেখা গেছে।
ইসলামী দলগুলো এখনো প্রকাশ্যে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি পালন না করলেও, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সরব হতে শুরু করেছে তারা। বিশেষ করে ভারতের রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মেদীর হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগের অপরাজনীতিকে সমর্থন দেয়ার প্রতিবাদে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টারর্স ইউনিটিতে বেশ কয়েকটি সভা সমাবেশ পালন করেছে।
সাধারণ মানুষও ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচিতে বেশ সাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে নিত্যপন্যের বাজারে ভারতীয় পন্যের বিক্রি বেশ কমেছে বলে জানা গেছে। তেল, আটা, মশলাসহ বেশ কিছু ভারতীয় পন্য এখন স্থানীয় পন্যের কাছে মার খেয়েছে। দোকানীরা বলছেন, মানুষ দেশীয় পন্য নিচ্ছে। ভারতীয় পন্য বর্জন করছে। যদিও বাজার থেকে ভারতীয় পন্যের নির্ভরতা একেবারে কমানো সম্ভব না। কিছু পন্য চলবেই, সেটুকু এখনও চলছে। তবে তা আগের চেয়ে অনেক কম বলে জানালেন রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা লোকমান হোসেন।
ভারত থেকে পন্য আমদানী কারক প্রতিষ্ঠানের মালিক আলহাজ¦ মহাসিন হোসেনের সাথে কথা হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তিনি মূলত ভোগ্য পন্য আমদানী করেন ভারতের রাজস্থান, দিল্লীসহ কয়েকটি প্রদেশ থেকে। তিনি জানালেন, ডলার সংকটে আমদানীর এলসি খুলতে সমস্যার সাথে যোগ হয়েছে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি। আগে নিয়মিত আদা, রসুন, পেঁয়াজ, গোখাদ্যসহ বিভিন্ন ভোগ্যপন্য আমদানী করেছি। কিন্তু এখন কাঁচা ফল আমদানী করছি। এর কারণ ভারতীয় পন্য বর্জনের ক্যম্পেইনে বাজার কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তাই এখন কাশমীর থেকে কাঁচা ফল আমদানী করছি।
ভারত থেকে প্রসাধণ সামগ্রী, বেবী ফুড এবং কাপড় আমদানী করে অনন্যা ইন্টারন্যাশনাল। গত দুই মাসে তাদের তিনটি চালানের অধিকাংশ পন্যই আটকে গেছে। রমজানের ঈদের আগে নতুন কোনো পন্য আনতে চাচ্ছেন না আমদানী কারক ফরিদুর রেজা।
ফেব্রুয়ারী মাসের ১০ তারিখ স্ত্রী, কন্যা ও পত্রকে নিয়ে কলকাতায় যান খন্দকার ফারুক। ব্যংকার স্ত্রী ও মাধ্যমিক পড়–য়া কন্যাকে নিয়ে দেশে ফেরার আগে কলকাতা নিউমার্কেটে পারিবারিক কোনাকাটার জন্য যান ফারুক। স্ত্রী কন্যা কিছুই কিনতে রাজি হয়নি বলে জানান ফারুক। শুধুমাত্র বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি চাদর কিনেই ফিরতে হয়েছে। তার কন্যা জানায়, ইন্ডিয়া আউট চলছে, এর মধ্যে ভারতীয় পন্য কিনব কেন?
ফারুক জানালেন, দেশে ফেরার পথে সাতক্ষীরা সীমান্তের ইমিগ্রেশনে মানুষের তেমন কোনো ভিড় চোখে পড়েনি। আগে এই ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ লাইন থাকতো। এইবার বাংলাদেশী মানুষের ভিড় ছিল না বললেই চলে। সবখানে চেয়ার দিয়ে রেখেছে। বেশ খাতির যতœ করছে ইন্ডিয়ান কর্মকর্তারা। তাদের ব্যবহারেও পরিবর্তন দেখলাম বলে জানালেন খন্দকার ফারুক।
বাংলা আউটলুক