আন্দোলন ঠেকানোর জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের ৭৫% পাচ্ছে পুলিশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সরকার মনে  করছে, রাজনীতির মাঠ আগের মতোই উত্তপ্ত থাকবে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিরোধীরা হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এজন্য সংশোধিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় জননিরাপত্তা খাতে মোট অতিরিক্ত বরাদ্দের ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ পাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের নির্বাচনের পর বিএনপিসহ বিরোধীরা আবারো সংঘাত, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তরের সংশোধিত বাজেটে পুলিশ নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরবর্তী সময়ের বিরোধী দলের আন্দোলন, অবরোধ ও হরতাল জন্য অতিরিক্ত পোশাক, নিরাপত্তা সামগ্রী, চিকিৎসা, পেট্রোল, নিবন্ধন ফি, বিদ্যুৎ, খাদ্যদ্রব্য, কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ, পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট কাঁচামাল, গোয়েন্দা, বেতন সরঞ্চামাদি অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অনান্য খাতে ১ হাজার ৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত চেয়েছে পুলিশ। যা মোট অতিরিক্ত বরাদ্দের ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। মোট অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে  ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা । ভবন ভাড়া, পুরস্কার, ভ্রমণ ও বদলিজনিত ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদা জানিয়েছে র‌্যাবও। নির্বাচন-পরবর্তী একই পরিস্থিতি থাকলে এসব খাতে আরো অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে হরতাল-অবরোধে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর জন্য তাদের ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাহিনীটির অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে ৪৬ কোটি টাকার। পাশাপাশি জ্বালানি বাবদ সাড়ে ৪ কোটি টাকার বিপরীতে ২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশকে সহযোগিতায় মাঠে থাকা আনসার সদস্যদের খোরাকি ভাতা হিসেবে বর্তমান বরাদ্দ ২ কোটি টাকা।

যাতায়াত ভাতা হিসেবে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে আনসারের। সব মিলিয়ে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও অতিরিক্ত চাহিদা দেয়া হয়েছে ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দে থেকে বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর বেতন ভাতা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, পুরস্কার, কম্পিউটার ও অনুষঙ্গিক , পরিবহন ব্যয়, মোটরযান মেরামত , জলযান মেরামত এবং সম্মানী খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ হিসেবে এ অর্থ প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বডার্র গার্ড বাংলাদেশ বরাদ্দ ছিল  ৪ হাজার ৯০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাজেট ছিল ৩ হাজার ৮৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এই অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে তা  ৩১১ কোটি ১১ লাখ টাকা কমেছে।

বাহিনীসংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণ পরিস্থিতির তুলনায় হরতাল ও অবরোধে কয়েকগুণ অতিরিক্ত লোকবল মোতায়েন করতে হয়। তাদের দৈনিক খোরাকিও এ খাত থেকেই নিশ্চিত করতে হয়। পাশাপাশি নাশকতা প্রতিরোধে টহল কার্যক্রম পরিচালনার ফলে ভ্রমণ ও জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হচ্ছে। নির্বাচন-পরবর্তী একই পরিস্থিতি থাকলে এসব খাতে আরো বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ব্যয় বাহিনীর সংশোধিত বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশে মোতায়েন করা  আনসার সদস্যদের জন্য ওই সংশোধিত বাজেট নির্ধারনের সভায় অতিরিক্ত ৫০ কোটি ৪৮ লাখ  টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়। শতকরা হারে মোট বাজেট বরাদ্দের ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। দুই সপ্তাহে আগে আনসার সদস্যদের জন্য খেরাকি বাবদ ৩৬ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে অর্থ বিভাগ ।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে , আনসার ও ডিভিপি অধিদপ্তরের অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা, অনুষ্ঠান / উৎসবাদি, নিরাপত্তা সামগ্রী, মূল বেতন (কর্মচারী), সেমিনার / কনফারেন্স ব্যয় এবং অন্যান্য  যন্ত্রপাতি  ও সরঞ্জামাদি খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ  প্রয়োজন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের  বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ২৬ লাভ টাকা।

কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের প্রস্তাবে অতিরিক্ত  চাহিদা রয়েছে  ৯৭ কোটি  ৫৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দের চেয়ে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড-এর ভূমি অধিগ্রহণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, পুরস্কার, অফিস ভবন ভাড়া, যানবাহন ব্যবহার, অফিস ভবন ভাড়া টেস্টিং ফি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পোষাক গোয়েন্দা, অনুষ্ঠান উৎসবাদি, বেতার সরঞ্জাম, কনসালটেন্সি, পেট্রোল ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭৪০কোটি ২ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের বরাদ্দ ছিল ৭১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বাংলা আউটলুক