সরকারের সহায়তায় হাজারো মণ্ডপে পূজা হচ্ছে

durga-puja

সরকারে সহায়তায় বাংলাদেশে হাজার হাজার মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রণদা প্রসাদ সাহার পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পঙ্কজ সরন বলেন, বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের উৎসব সুন্দরভাবে পালিত হচ্ছে। সরকারে সহায়তায় এ দেশে হাজার হাজার মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ভারতীয় ভিসা পদ্ধতি সহজ করার প্রচেষ্টা চলছে। আগামী জানুয়ারি মাসে এ প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে শুধু পর্যটক ভিসা ছাড়া অন্য সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে ই-টোকেন ও ভিসার জন্য নির্ধারিত সাক্ষাতের সময় বাদ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের পর্যটকসহ অন্যান্য ভিসাধারীদের ইচ্ছামতো ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এক সীমানা দিয়ে প্রবেশ ও অন্য সীমানা দিয়ে বের হওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।

এর আগে কুমুদিনী চত্বরে পৌঁছালে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা পঙ্কজ সরনকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি ভারত সরকারের সহায়তায় নির্মিত কুমুদিনী হাসপাতালের পয়োনিষ্কাশন পদ্ধতি, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকল্প এবং দূষিত পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক দুলাল চন্দ্র পোদ্দার উপস্থিত ছিলেন।

পরে পঙ্কজ সরন ভারতেশ্বরী হোমস ও ঐতিহ্যবাহী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এদিকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কুমুদিনী চত্বরে ভিড় করেন। এর মধ্যে স্থানীয় সাংসদ মো. একাব্বর হোসেন, সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান খান, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম আহমেদ পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।

 

উৎসবের ফ্যাশনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মডেল: জাকিয়া ঊর্মি, সাজ: কানিজ আলমাস খান, পোশাক ও গয়না: অঞ্জনস ও কনক, ছবি: সুমন ইউসুফ, স্থান: পেদা টিং টিংএকাল-সেকাল। এই সময়-সেই সময়। প্রাচীনকাল, আবহমানকাল ও বর্তমানকাল—এসব অভিব্যক্তি হচ্ছে সময়কে বর্তমান সময়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা; একটা অবলোকনের অভিজ্ঞতায় সবার কাছে ব্যক্ত করা। দুর্গাপূজা পারিবারিক, বারোয়ারি, তারপর সর্বজনীন। আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্যাপিত হচ্ছে পূজা। আমাদের বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং পৃথিবীর অনেক দেশের সেই শহরগুলোতে, যেখানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। সবাই বছরের এই সময়টা নানাভাবে, নানা ভঙ্গিতে উদ্যাপন করে উৎসবের দিনগুলো। বর্ণিল মাত্রায় আনন্দ উৎসবের আন্তরিক ও বর্ণাঢ্য আনন্দে মেতে ওঠে তারা।

সাবেকি ধাঁচের গয়নার সঙ্গে ফিউশন সাজ। মডেল: সাদিয়া জ্যোতিপূজার ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিত তো আছেই। বর্তমান সময়ে উদ্যাপন, মণ্ডপ তৈরিতে শৈল্পিক নানা প্রচেষ্টা দেখা যায়। আলোকসজ্জায় প্রযুক্তি উন্নয়নের ধারা যোগ করেছে আশ্চর্য রকম বৈচিত্র্য। উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত, নাটক, ঢাকের বাজনার প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকা, নৃত্যকলা, তারকাদের উপস্থাপনা ও কথন—আরও কত কী যুক্ত হয়েছে! প্রসাদ বিতরণের বিষয়টি আগের মতো আপ্যায়ন ধারায় চর্চিত হচ্ছে পূজা কমিটিগুলোর সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী।

বিগত দিনে দুর্গা প্রতিমার সাজসজ্জা ও ভাস্কর্য নির্মাণে পটুয়াদের যেমন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের অলিখিত প্রতিযোগিতা ছিল, আজও তা সমানভাবে উজ্জ্বল। যদিও সাবেকি ধারার প্রতিমা তৈরির নিপুণতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও পরম্পরাকে স্মৃতিতে ধারণ করে আজও কাজ করে চলেছেন, তেমন কারুশিল্পীর সন্ধান পাওয়া সহজ নয়। সিনেমা ও আধুনিক যুগের শিল্পীদের প্রভাবে দুর্গা প্রতিমার নতুন নতুন মুখভঙ্গির উপস্থাপন, অসুরের নাটকীয় অাগমন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হচ্ছে—এপার-ওপার বাংলা দুই জায়গাতেই ক্লাব, সমিতি ও পূজা কমিটির উদ্ভাবনী চিন্তার কারণে।

সবাইকে নিয়ে ধর্মীয় আঙ্গিকে—সামাজিক উৎসব উদ্যাপন, নতুন পোশাক, উপাদেয় খাবারদাবার, আপ্যায়নের আগ্রহ ও উপহার বিতরণ—সবই প্রতিবছর নতুন মাত্রা তৈরি করে চলেছে। সময়ের গতিময়তায় যা আজ সর্বজন আদৃত।

বাংলাদেশে ফ্যাশন হাউসগুলো এবং পোশাক তৈরি ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্গাপূজার উৎসবকে বছরের একটি লাভজনক ব্যবসার বিশেষ সময় হিসেবে বিবেচনা করছে এখন। বিশেষ রং, বিশেষ গল্প তৈরিতেও পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানগুলো। পূজা উদ্যাপনের চার দিনই নতুন পোশাক পরার এবং নিজেকে অন্য রকমভাবে সাজানোর একটা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে সবাই নিজ নিজ সাধ ও সাধ্য অনুযাী, যা পূজার বেশ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। মেয়েদের শাড়ি পরা, ছেলেদের ধুতি-পাঞ্জাবি কিংবা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরার একান্ত ইচ্ছেটুকু দিনের বেলায় ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যাপনের সময় দেখা যায়। আবার সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অথবা অন্য পূজামণ্ডপগুলো ঘুরে ঘুরে দেখার সময় হাল ফ্যাশনের পোশাক পরতেও দেখা যায়। পুরুষের গায়ে উত্তরীয়ও বহাল তবিয়তে জায়গা করে নেয়—দুর্গার মুখচ্ছবির গ্রাফিক ছাপা টি-শার্টের সঙ্গে। জিন্সের প্যান্ট কোনোই বিড়ম্বনা তৈরি করে না।

পূজার আয়োজনে, সাজে ঐতিহ্যবাহী রূপটাও দেখা যায়আগেকার পূজা উদ্যাপনের সঙ্গে এ সময়ের পূজা উদ্যাপনে পার্থক্য শুধু এটুকুই যা দেখা যায়—নানাবিধ উপকরণ, প্রেক্ষিত, আঙ্গিক ও মানবিক বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গির সংযোজন। আজ যে কেউ নতুন খাবার, নতুন পোশাক, নতুন সান্ধ্য আরতি, নতুন ঢাকের বাজনা, নতুন ভাবনার দুর্গা প্রতিমা, পূজামণ্ডপ পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করার মিনিট দু-একের মধ্যেই ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে দূর-দূরান্তে। এই চার দিনের মধ্যেই শত-সহস্র মানুষ বিশেষ এবং অভূতপূর্ব দর্শনীয় বিষয়বস্তুগুলো অবলোকনের অবগাহনে পরিতৃপ্ত হচ্ছে। আনন্দে, অনুভবে আক্ষেপে কিংবা উৎফুল্লতায় আপ্লুত হচ্ছে। সময়ের মহাকালব্যাপী যে গতিময় চলমানতা, সেখানে ঐতিহ্য পরম্পরার নির্যাস যেমন প্রোথিত রয়েছে, ঠিক তেমনি সময়ের বহুবিধ ধারণা ও ভাবনাগুলোও বিকশিত হচ্ছে সর্বসাধারণের মনোযোগ, আগ্রহ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। তারা।

চিরায়ত লাল–সাদা গরদ শাড়ির নকশাতেও এসেছে বৈচিত্র্যপ্রতিদিনের আকাশ সংস্কৃতিতে পূজা উপলক্ষে নানাবিধ অনুষ্ঠান, ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা, বিশেষ প্রতিবেদন, দৈনিক সংবাদপত্রের পূজাবিষয়ক ফিচার, রেসিপি ও আলোকচিত্র ইত্যাদি সবই সবাইকে জানায় কোথায় কী হচ্ছে। একই সঙ্গে সময়ের ট্রেন্ডকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করছে। পূজা উদ্যাপনের দিনগুলোতে নিরামিষের প্রাধান্য থাকলেও আমিষও আজকাল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্য, ছোঁয়াছুঁয়ি, বাছবিচার, ধর্মীয় অনুশাসন ও বিধিনিষেধের দর্শনগুলো ঐচ্ছিক বিষয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্গা পূজা উদ্যাপনে আনন্দ ও হাসিখুশি মনোভাব তৃপ্তি ও আকাঙ্ক্ষার ইচ্ছেগুলো শুধু একটি বিষয়েই সীমাবদ্ধ নেই আজ। পূজামণ্ডপে পূজা শেষে অঞ্জলি দিচ্ছে যেই তরুণ-তরুণী, সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত বা নৃত্যেও তাদের দেখা যেতে পারে। আবার পারিবারিক অতিথি আপ্যায়নেও তাদের ভূমিকা যেমন উজ্জ্বল, ঠিক তেমনি পূজার পোশাক ফ্যাশন ও খাবারদাবারের নতুন ভাবনার প্রাপ্তির গল্পগুলোও ফেসবুকে আপলোড করছে তারা সমান অন্তরিকতার সঙ্গে।

সুতরাং একাল ও একদিন আগামী সময়ে সেকালের নামেই পরিচিত হবে। আনন্দ উৎসব ও উদ্যাপন রইবে তার আপন মহিমায় সময়ের প্রেক্ষাপটে, প্রতিদিন নতুন ভঙ্গিতে চলমান। সর্বজনীন দুর্গাপূজা সবার জন্য, সবার কল্যাণে এক মহামিলনের ধর্মনিরপেক্ষ সংগীতের সমাহার।

লেখক: ডিজাইনার