ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে তারানার চিঠি
মোর্শেদ নোমান
বিশদ আলোচনা করার আগ্রহ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আজ সোমবার তিনি এ চিঠি পাঠান।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের নানা ধরনের অপব্যবহারসহ নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পরই তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এর সঙ্গে ফেসবুক খোলা বা বন্ধ রাখার কোনো সম্পর্ক নেই বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে সবুজ সংকেত পেলেই ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যম চালু করা হবে।
গত শনিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় তারানা হালিম জানিয়েছিলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য জানতে একটি চুক্তি করার লক্ষ্য নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবে সরকার।
বর্তমানে দেশে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। মানহানিকর কনটেন্ট, নারীর প্রতি অবমাননা, রাজনৈতিক অপপ্রচার ও জঙ্গি কার্যক্রমে উৎসাহ দিয়ে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির নানা চেষ্টা ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ধরনের চুক্তি না থাকায় ফেসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমে ঘটা—এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে ফেসবুকের কোনো অ্যাডমিন না থাকায় আপত্তিকর পোস্ট বা কনটেন্ট সরানোও কঠিন হয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, এর আগে ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন তারানা হালিম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি বিটিআরসি। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১২ নভেম্বর ফেসবুকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’-এ বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে ফেসবুকের কাছে তিনটি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য চায় বাংলাদেশ সরকার। তিনবার অনুরোধের মাধ্যমে এই তিনজনের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সরকারের এ অনুরোধে ফেসবুক সাড়া দেয়নি বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের শেষ ছয় মাসে পাঁচটি অনুরোধের মাধ্যমে পাঁচজনের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছিল সরকার। গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ফেসবুকের কাছে ১৭টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। মোট সাতটি অনুরোধের মাধ্যমে এই তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ফেসবুকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো অনুরোধে সাড়া দেয়নি ফেসবুক।