একটি স্বপ্নঃ পেছনের ডিফেক্ট, সামনের চ্যালেঞ্জ
(দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত আমার আজকের কলাম)
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার চার পাশের বলয়টিতে একটা পরিবর্তনের অাভাস দিয়েছেন। এই ধরনের একটা পরিবর্তন অনেক আগে থেকেই বিএনপির শুভাকাঙ্খী ও সমর্থকদের অনেকেই কামনা করেছিলেন। সেই পরিবর্তনটুকু কেমন হবে তার মোটামুটি একটি ধারনা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে । ‘
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার একটি স্বপ্ন ছিল
দেশের সেরা ছাত্রদের দেশ সেবায় সম্পৃক্ত করতে। বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে তিনি নিজে হিজবুল বাহারে ভ্রমণ করেছেন। সুনীল সমুদ্রের স্বাপ্নিক পরিবেশে নিজের স্বপ্ন ও আকাঙ্খাগুলি ঐ সব মেধাবীদের মনে গেঁথে দিয়েছেন। বার বার অাফসোস হয়, এই মানুষটি যদি বেঁচে থাকতেন তবে আমাদের দেশটি কমপক্ষে আজ মালয়েশিয়ার কাতারে পৌছে যেতো। এই দেশটি গরিব নয়। দেশটিকে গরিব করে রাখা হয়েছে। কাজেই তারেক রহমানের এই উদ্যোগটি দেখে আমার মত অনেকেই কিছুটা নষ্টালজিক বা স্বপ্নকাতর হয়ে পড়েছে। জিয়ার কোন ভিডিও ক্লিপ পাবেন না যেখানে তিনি কোন আয়েসী ভঙ্গিতে বসে গালগল্প করছেন, সিগারেট ফুঁকছেন । সবখানেই দেখা যায় তিনি ছুটে চলছেন, সঙ্গের সবাই তার সাথে দ্রুতপানে ছুটছে। পুরো একটা জাতিকে দ্রুত সম্মুখ পানে ঠেলে নিচ্ছেন।
তােরক রহমানের পরামর্শকদের একজন হলেন জনাব মাহদি আমিন। তিনি পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের লেকচারার ও গবেষক। অক্সফোর্ডের বাংলাদেশ পলিসি ফোরামের সভাপতি। তারেক রহমানের শিক্ষা,পলিসি এবং গবেষনা সংক্রান্ত পরামর্শক। তিনি তারেক রহমানের কর্মমুখর জীবনের উপর একটি সুন্দর প্রামাণ্য চিত্র নির্মান করেছেন । প্রামাণ্যচিত্রের শিরোনামটি দেয়া হয়েছে A Man Can Change a Nation.
তারেক রহমান সম্পর্কে আমাদের মিডিয়া কিছু জিনিস আড়াল করতে চেয়েছে, সে সবের অনেক কিছুই এই প্রামাণ্য চিত্রটিতে উঠে এসেছে। সুন্দর বাচন ভঙ্গি এবং অাকর্ষনীয় চেহারার এই তরুণ নেতার কিছু উদ্যোগকে হুমকি গণ্য করে আধিপত্যবাদী শক্তির দেশীয় ক্রীড়নকগণ। প্রগতি ও উন্নয়নের প্রতীক নিজের বাবার মত দেশের অানাচে কানাচে সফর করে যে আশা ও উদ্দীপনার বীজ তৃণমূলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, দেশের যুব সমাজের মাঝে যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
অাওয়ামীলীগের নতুন প্রেমিক কর্নেল তাহের শেখ মুজিবের লাশকে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। শহীদ জিয়ার কবর নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতারা অনেক বাজে মন্তব্য করেন । বিরোধী দলের মূল নেতার প্রতি আমাদের দুঃখজনক রাজনৈতিক ট্রাডিশন ভঙ্গ করে তারেক রহমান শেখ মুজিবের মাজার জেয়ারত করেছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে আসলে ফুলের তোড়া উপহার পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে বেগম খালেদা জিয়া শেখ মুজিব ও জিয়া উভয়কেই সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সব শুভ ভাবনার প্রতি প্রতিপক্ষ শিবির থেকে সম পরিমাণ সৌজন্যতা কিংবা সাড়া পাওয়া যায় নি।
বরং তারা অনবরত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে কুট কথা বলেই যাচ্ছেন । তারা যখন জিয়ার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকে তখন বাধ্য হয়ে তারেক রহমান তাদের নেতা সম্পর্কে কিছু অপ্রিয় সত্য কথার বোমা ফাটানো শুরু করেছেন। যার ফলে তাদের মাথাও এখন খারাপ হয়ে গেছে, গালি ছাড়া তাদের মুখ থেকে এখন অন্য কিছু বের হয় না।
টপ টু বটম আওয়ামী নেতারা এজন্যে তারেক রহমানকে গালিগালাজ শুরু করলেও আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রী এ কে খন্দকার, তাজ উদ্দীন কন্যা শারমিন আহমদ তারেক রহমানের বক্তব্যগুলিকেই আরো পোক্ত করে ফেলেছেন। একটা রাজনৈতিক কৌশল ( জিয়ার বিরুদ্ধে তাদের মুখ বন্ধ করা) থেকে বলা সেই বক্তব্যগুলি জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও যুক্তির বিপরীতে যাচ্ছে না । প্রতিপক্ষের জন্যে কষ্টের কারন হলো ইতিহাস ও জনগনের সমর্থন তারেক রহমানের পক্ষে।
আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, এক- এগারোর মূল টার্গেট ছিলেন তারেক রহমান। এটা নিয়ে মিডিয়া কী ভেলকি দেখিয়েছে তা এখন সময়ের উদর থেকে বের হয়ে পড়ছে । এখন পর্যন্ত জরুরি সরকার থেকে শুরু করে তাদের সফল একজিটের বর্তমান সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি চার্জ শিটও দাখিল করতে পারে নি। এটা হয়েছে ইরাকের ‘উইপন অব মাস ডেস্ট্রাকশনের’ অনুরূপ ‘করাপশন অব মাস ডেষ্ট্রাকশন’!
আমার এই কলাম কোন ভবন বা ব্যক্তির পক্ষে অন্ধ ওকালতি করছে না। শুধু আমাদের মিডিয়ার আসল চেহারাটি তুলে ধরতে একটি তুলনামূলক আলোচনা টানতে চাচ্ছি। মনে করুন, এমন একটি মিটার আবিস্কার হয়েছে যা দিয়ে দুর্নীতি মাপা যায়। হাওয়া ভবনের দুর্নীতির মাত্রাকে সেই মিটার দিয়ে মাপুন। একই ভাবে হাওয়া ভবনের সমকক্ষ বর্তমানের একটি ভবনের দুর্নীতির মাত্রাকে মাপুন – যে ভবনটি ( নাম অদৃশ্য বা শূণ্যভবন) শেয়ার বাজার,হলমার্ক,ডেসটিনি, পদ্মা সেতু,কালোবিড়াল, কুইক রেন্টাল, ব্যাংকিং সেক্টরের মহালুটপাটের তাপ ধারন করেছে।
এবার অন্য একটি মিটার বের করুন। যেটা দিয়ে শব্দের তীব্রতা বা লাউডনেস মাপা যায়। হাওয়া ভবনের দুর্নীতি নিয়ে আমাদের পুরো মিডিয়া যতদিন ও যে মাপে উচ্চবাচ্য করেছে তা রেকর্ড করুন । এবার সেই মিটার দিয়ে শূণ্যভবনের দুর্নীতির জন্য একই মিডিয়া যতদিন ও যে তীব্রতায় উচ্চবাচ্য করেছে তা রেকর্ড করুন । তুলনামূলক ফলাফল আপনাকে অবাক করে দিবে। দশ ডিগ্রীর জন্যে যে মাত্রার উচু ভয়েস ছিল এখন ১০০ ডিগ্রীর জন্যে সেই মাত্রার ভয়েসটি নেই।
এক শেয়ার বাজারেই ত্রিশ লাখ বিনিয়োগকারীকে ফতুর বানানো হয়েছে। একটা দেশে মিডিয়া কর্মক্ষম থাকতে এত সংখ্যক কুকীর্তির পরেও কোন সরকার টিকে থাকে কিভাবে? এক এগারোর আগে যেভাবে আমাদের প্রধান প্রধান কাগজগুলি মন্তব্য কলাম বর্ষন করেছে গত সাত আট বছরে তার কোন ছিটেফাটাও দেখা যাচ্ছে না। কারন এগুলি গণমাধ্যম বা জনগণের মাধ্যম নয় – এগুলি রাক্ষসদের রক্ষার মাধ্যম।
দেশ থেকে দৃর্নীতি সমূলে উৎপাটিত হোক তা সবাই চাই। মতলববাজ মিডিয়ার অংশ যারা এই দুর্নীতির সরাসরি বেনিফিশিয়ারি, তাদের ভূমিকার জন্যেই আমাদের জন্যে এই কাজটি জটিল হয়ে পড়েছে। আমাদের মিডিয়া যদি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় সঠিক পরিমাণে প্রশংসা বা সমালোচনা করতে পারতো তবে দেশের অবস্থা কখনই এতটুকু খারাপ হতো না।
একজন মানুষের প্রতি অন্ধ প্রেম যেমন ক্ষতিকর, অন্ধ বিদ্বেষ আরো ক্ষতিকর। বিশেষ করে যখন তার সাথে একটি পুরো জাতির স্বার্থ বা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকে।
বাঙালি হুজুগের জাত। এই হুজুগ সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে দেশের মিডিয়া। ভয়ংকর কথাটি হলো দেশ ও জাতির শত্রুরা আমাদের এই দুর্বলতার জায়গাগুলি চিনে ফেলেছে। কাজেই আমাদের প্রাণ ভোমরাগুলির নিয়ন্ত্রণসমূহ তাদের হাতে চলে গেছে।
আমরা বেখেয়াল। প্রতিদিন সকালে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এই বিষ কিনছি কিংবা যে গুলিটি দিয়ে আমাকে শেষ করা হবে সেই গুলিটি তৈরি করার খরচ নিজেরাই বহন করছি ।
কাজেই এদেশের মিডিয়া ঠিক করেন। তাহলেই দেশের সবকিছু ঠিক হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হলো, কারা এই মিডিয়াকে ঠিক করবে ? জবাব হলো, আমি আপনি সকলে। আমরা সচেতন হলে এই মিডিয়া আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এমন ফুটবল খেলতে পারতো না।
কাজেই দেশের মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ ভরে জনাব তারেক রহমানের নতুন এই উপদেষ্টাদের প্রতি দৃষ্টি ফেলেছে।
এই পরামর্শক পরিষদের সফলতা নির্ভর করবে তারা কতটুকু নিঁখুত ভাবে নিজেদের দুর্বলতাগুলি আইডেন্টিফাই করেন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে কেমন প্রস্তুতি গ্রহন করেন তার ওপর। তাদের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই বৈরী মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করা। উদ্দেশ্য ও কৌশলটি হতে হবে To manage the media so that media don’t manage you. বৈরি মিডিয়াকে আরো বৈরি বানানো যাবে না। যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠ হতে বাধ্য করতে হবে। দরকার পড়লে সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে মূল মিডিয়াকে লাইনে আনতে হবে।
প্রামাণ্য চিত্রে বর্ণিত আশাবাদ দেখে মনে হলো, ইয়েস, তারেক রহমান ক্যান। বাট..
এই বাট বা কিন্তুগুলি খুঁজে বের করতে হবে।
একজন ব্যক্তি একটি জাতির চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে এরকম উদাহরন অনেক রয়েছে। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ এবং মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ আমাদের হাতের কাছে রয়েছে।
আজ স্পষ্ট হয়েছে, এক এগারো সৃষ্টি করা হয়েছিল তারেক রহমানকে প্রতিহত করতে। তাকে ভিলেইন বানাতে বা ডেমোনাইজ করতে অনেক বড় ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। গোলাম মাওলা রনি ঠিক বলেছেন, এই এক এগারো তাকে যে অভিজ্ঞতা দিয়েছে, তা হাজার খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ও দিতে পারবে না। সেই এক এগারোর অভিজ্ঞতাকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে তিনি এই জাতির চেহারা সত্যিই পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন। এক এগারো তার জন্যে শাপে বর হতে পারে।
এক্ষেত্রে শুধু ইচ্ছেটিই যথেষ্ঠ নয়। তজ্জন্যে একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করা দরকার । নিজের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি সাহস ও বিচক্ষনতার সাথে আলাদা করতে হবে । শক্তিকে দুর্বলতা এবং দুর্বলতাকে শক্তি মনে করলে ভুল হবে। শক্তিগুলিকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং দুর্বলতাগুলিকে অকেজো বা নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে।
এখন তারেক রহমান যা চান তাতেই একটু সুইট যোগ করে যদি পরামর্শক গণ পরিবেশন করেন তাতে কোন ফায়দা হবে না। বরং তিনি যদি দেশ,জাতি ও সময়ের জন্যে প্রয়োজনীয় তিতা উপদেশটি গ্রহন করার মানসিকতা তৈরি করতে পারেন তবেই এই জাতির ভাগ্যটি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তখনই বলা যাবে,ইয়েস হি ক্যান।
এত সব আশাবাদ ব্যক্ত করার আগে একটা বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন না করে পারছি না। একটি ছবিতে দেখা গেলো তারেক রহমান বক্তৃতা করছেন এবং তার পেছনের পোষ্টারে লেখা আছে দেশনায়ক তারেক রহমান। ছবি অনেক কথা বলে। তাই বিষয়টি আমার মতো অনেকের কাছেই ভালো ঠেকে নি । লি কুয়ান ইউ কিংবা মাহাথির মোহাম্মদকে কখনই এই জাতীয় বিশেষনে বিশেষায়িত করার প্রয়োজন হয় নি। প্রথমেই যারা এই ধরনের বিশেষণে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন তাদের পক্ষে দেশের জন্যে কাজ করা দূরূহ হয়ে পড়ে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিষয়টি অত্যন্ত মামুলি। কিন্তু সত্যিকারের আধুনিক নেতা হওয়ার পথে বিষয়টি বড় অন্তরায়। নতুন প্রজন্মের চোখে বিষয়টি উৎকট লাগে।
জন্মসূত্রেই তারেক রহমান এবং সজীব ওয়াজেদ জয় কিছু ভক্ত পেয়ে গেছেন। এর বাইরে কিছু মানুষ রয়েছে যাদের ইন্টেলেকচুয়াল হাইট একটু বেশি। তাদের মন পেতে হলে অবশ্যি সময়ের চাহিদার দিকে তাকােত হবে। ভেতরের চিন্তা চেতনা সনাতনী বা এনালগ রেখে বাইরে ডিজিটাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেই অাধুনিক রাষ্ট্রনায়ক হওয়া সম্ভব হবে না।
আশা করব, তারেক রহমানের নতুন উপদেষ্টারা এই বিষয় গুলির দিকে একটু মনোযোগ দিবেন এবং তাকে সত্যিকারের আধুনিক নেতা হতে সহযোগিতা করবেন।
একজন মাহাথির কিংবা লি কূয়ান ইউ হতে হলে মানুষের মনের বা চোখের ভাষা পড়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। মাহাথির মোহাম্মদ কিংবা লি কুয়ান ইউয়ের জীবনী পড়লেই দেখা যায় যে তারা কতটুকু সতর্ক দৃষ্টির অধিকারী ছিলেন ।একবার লি কূয়ান ইউ কানাডার অটোয়াতে কমন ওয়েলথ সম্মেলনে যান। সময়টা ১৯৭৩ সালের অাগষ্ট মাস। তার হোটেল রুম থেকে লক্ষ্য করেন যে তৃতীয় বিশ্বের অত্যন্ত গরীব একটি দেশের সরকার প্রধানকে নিয়ে আসা একটি বিমান ঠাঁই পনের দিন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ তিনি নিজে এসেছেন একটি প্যাসেঞ্জার বিমানে করে। তিনি দেশটির নাম ও তখনকার নেতার নামটিও উল্লেখ করেছেন। দেশটির নাম ছিল বাংলাদেশ। নেতার নামটি নাই বা উচ্চারন করলাম।
কাজেই চল্লিশ বছর পর আজ সিঙ্গাপুর কোথায়, আর আমরা কোথায় ? যতই তিতা লাগুক, এই কঠিন কথাগুলি আমাদের সম্ভাব্য নেতাদের জানা থাকা দরকার।
আমার ফেইস বুকে এক জন আমাকে ভয়ানক গালি দেয়। ইদানিং এই ধরনের গালি ও হুমকি বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই তার ফেইস বুকে গিয়ে তাদের মানসিক গঠনটি আরো একটু জানার আগ্রহ জন্মে । গিয়ে দেখি তার অনেক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয়কে মাহাথির মোহাম্মদের সাথে তুলনা করে অনেক আশা, অনেক স্বপ্নের কথা লেখা রয়েছে ।
মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মিলটি কীভাবে টানলেন বুঝতে কষ্ট হলো। মাহাথির মোহাম্মদ গড়পরতা মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলে গালি দেওয়াকে ডিফেন্ড করেছেন। মুসলিম বিশ্বে তাঁর মত স্পষ্টভাষী নেতা খুব কম এসেছে। তিনি বলেছেন, পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়লেই এদের চোখে মৌলবাদী হয়ে পড়ে। প্রকারান্তরে সজীব ওয়াজেদ জয় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মৌলবাদী গালিটি উঠতে বসতে প্রয়োগ করেন । এক ইহুদি লেখকের সাথে যুগ্নভাবে মনে করেন যে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীতে ত্রিশ ভাগ মাদ্রাসা ছাত্র ভর্তি হয়েছে। ব্যাংক ও হাসপাতাল মৌলবাদী হয়ে পড়েছে। দেশে বোরখার সংখ্যা পাঁচ শ ভাগ বেড়েছে।
ব্যাংক মৌলবাদী হতে পারে। কিন্তু হাসপাতাল মৌলবাদী হয় কিভাবে ? এই আর্টিকেলটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে কিছুটা সহায়তা করেছে। কিন্তু দেরিতে হলেও পশ্চিমাদের বোধোদয় হয়েছে। এক মৌলবাদ (আওয়ামী) দিয়ে অন্য মৌলবাদকে প্রতিহত করা যায় না। বরং তা আরও বৃদ্ধি পায়। সেনাবাহিনীতে তিরিশ ভাগ মাদ্রাসা ছাত্রের এই সংখ্যাটি কিভাবে পেলেন তা নিয়ে অনেকদিন ভেবেছি। মনে হচ্ছে ক্যান্টনমেন্টের মসজিদগুলিতে উপস্থিতির সংখ্যা থেকে এই পারসেন্টেজটি বের করেছেন। তাঁর মা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মদীনার সনদ অনুযায়ী দেশ চালান। আর সজীব ওয়াজেদ জয় মাদ্রাসায় ছাত্র সংখ্যা কমিয়ে কার্লের সাথে নিউইয়র্কের কোন ক্লাবে বসে তা সেলিব্রেট করেন। তিনি সাদা চামড়ার আহলে কিতাব বিয়ে করে মায়ের আশীর্বাদে টেনেটুনে উতরে গেছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর নাতি হয়েও নানাকে দাদা ডেকে বসেন। ‘ফর্টি থ্রি’ ইয়ার্সের বাংলা অনুবাদ করেন ‘তেয়াত্তর বছর’ । কাজেই তার পক্ষে মাহাথির মোহাম্মদ তো দূরের কথা – তার নিজের নানার মত নেতা হওয়াও দুস্কর।
তারপরেও আশা করতে দোষ কি?
দৃষ্টিটা রাখুন আকাশের পানে।
তাহলে অন্তত গাছের পাতা তো স্পর্শ করতে পারবেন।