দেশজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় উদ্‌যাপিত হলো ঈদুল আযহা

24 Live Newspaper

যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর ধর্মীয় অনুভূতি এবং ত্যাগের মহিমায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদ্‌যাপিত হয়েছে। ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব, যা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। বহু বছর ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত করে আসছে।

eid hugছবি – আল-জাজিরা

শনিবার (৭ মে) সকালে সারাদেশের মুসলমানরা নিজ নিজ এলাকার ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে খতিবরা তাদের খুতবায় কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

রাজধানী ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে সাতটায় পবিত্র ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা ও এর আশপাশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এই জামাতে শরিক হন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান জামাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সমাজের সর্বস্তরের হাজারো মানুষ অংশ নেন।

অন্যদিকে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল সাতটায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ৮টায় দ্বিতীয়, সকাল ৯টায় তৃতীয়, সকাল ১০টায় চতুর্থ এবং সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের নামাজ আদায় করেই নগরবাসী পশু কোরবানির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা পশু জবাইয়ের কাজে অংশ নেন। প্রতিবেশীরা একে অপরের পশু কোরবানিতে সহযোগিতা করেন। অনেকে নিজ বাড়ির সামনের রাস্তায়, গাড়ির গ্যারেজে অথবা খোলা মাঠে পশু কোরবানি দেন।

ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

ইসলামী বিধান অনুযায়ী, ঈদের দিন ছাড়াও পরবর্তী দুই দিন, অর্থাৎ আগামী সোমবার আসরের নামাজের ওয়াক্ত পর্যন্ত পশু কোরবানি করা যাবে। কোরবানির পশুর মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এবং বাকি এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা হয়।

উল্লেখ্য, স্থানীয় হিজরি মাস গণনার ভিত্তিতে শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আযহা উদ্‌যাপিত হয়েছে। এদিন মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানি এবং হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার কিছু গ্রামসহ বিশ্বের অনেক দেশে শুক্রবার ঈদুল আযহা উদ্‌যাপিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ জামাত

কিশোরগঞ্জ: উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঈদগাহ ময়দান, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আযহার ১৯৮তম জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বহু মানুষ এই জামাতে নামাজ আদায় করেন এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করেন।

চট্টগ্রাম: নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। পরে সকাল সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমামতি করেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক। উভয় জামাত শেষে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগেও নগরের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

দিনাজপুর: দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে সারাদেশ থেকে বহু মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট আলেম হাফেজ মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই জামাতে অংশ নেন।

ময়মনসিংহ: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের আমেজে ময়মনসিংহে পবিত্র ঈদুল আযহা উদ্‌যাপিত হয়েছে। জেলার প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে সাতটায় নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। সকাল সাড়ে আটটায় দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক প্রধান জামাতে অংশ নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here