১২ মে ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম
সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে নিয়ে আপসের পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। জোটের নেতারা বলেন, পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এ দেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিপূর্ণ সংস্কার ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হবে। একইসঙ্গে তারা আরও বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় যাবেন, তারাও যদি মনে করেন ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা ভুলে যাবেন, তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। জনগণ ছুড়ে ফেলে দেবে।
শুক্রবার (১২ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন জোটের নেতারা। সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভোট নিরাপদ নয়, জিনিস পত্রের দাম নিরাপদ নয়…।
প্রধানমন্ত্রীর আরেকবার ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা উল্লেখ করে মান্না বলেন, থাকতে পারবেন কি? কিন্তু উনি থাকতে চান। বলব ক্ষমতা থেকে চলে যান, তাহলে ভোট করতে পারবেন। ডিসেম্বরের মধ্যে গায়ের জোরে নির্বাচন করবেন, এবার সেটা আমরা হতে দেব না। আরেকবার ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন বাস্তব হবে না। তা করতে দেওয়া হবে না বলেই গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল রাজপথে নেমে এসেছে, একটাই বার্তা দেবে সবাই- ‘হয় যাও, না হলে বিদায় করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রসঙ্গে মান্না বলেন, কি পেয়েছেন এ সফর থেকে? প্রতিবার বিদেশ সফর শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সংবাদ সম্মেলন করেন। এবার তো তেমন কিছুই করলেন না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে কেউ যদি মনে করেন রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা ভুলে যাবেন, কিন্তু জনগণ ভুলতে দেবে না। ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন।
সাকি বলেন, বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান থাকবে, কোনোভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না। এ দেশের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, মাঠে আপনাদের নামতেই হবে। দেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। মাত্র একটি পরিবারের স্বার্থরক্ষার জন্য তারা পুরো দেশকে বিভাজিত করে রেখেছেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের দায়ভার জনগণ আর নেবে না। কিন্তু সরকার আগের মতো আরেকটি নির্বাচন করার পায়তারা করছেন। তবে এবার মানুষ রাস্তায় নেমেছে, সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে। তাদের ভোটাধিকার রক্ষা করবে।
সরকারের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কিভাবে পদত্যাগ করবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে- এ দুইটি ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিন। বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান করেন। বিরোধী দল নিশ্চয় কার্যকর সংলাপ করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছি তাদের উদ্দেশ্য করে বলব, তীরে এসে যেন তরী না ডুবে। সব সংকীর্ণ চিন্তা পরিহার করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিরোধী দলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদের চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, আমাদের মঞ্চ ছেড়ে গেছে একটি দল। তারা কেন চলে গেল, জানি না। আন্দোলন যখন চলে তখন নানা ধরনের ঘাঁপটিবাজেরা, সুবিধাবাদীরা থাকে। আগামী কুরবানির ঈদে কুরবানির পশুর মতো ঘাঁপটিবাজদেরও কুরবানি হয়ে যাবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, সরকার যায়, সরকার আসে। গত ৫২ বছরে ১৭ বার ক্ষমতার বদল হয়েছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গণতন্ত্র মঞ্চ জনগণের এ ভাগ্যবদলের সঙ্গী হওয়ার শপথ নিয়েছে। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে দেশে ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার করা হবে। এ সংস্কারই জনগণের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ওয়াদা করছি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। যারা এ বিনা ভোটের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন, তাদের বিচার করা হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের তাসলিমা আকতার প্রমুখ।