২২ মার্চ ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মন ভুলানো কথা ও সব আশ্বাস উড়িয়ে দিয়ে রোজা শুরুর একদিন আগেই ইফতারি আর কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পণ্যের দাম বাড়ার এ হাল আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবছরের মতো এবারও পর্যাপ্ত মজুদের কথা বলা হলেও আওয়ামী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অতিমুনাফার লোভে ভোগ্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয়।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনামলে আওয়ামী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মনোনীত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলন করে রোজায় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় দাম বাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু, বুধবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ভোগ্যপণ্যের দামে উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, মাছ, মাংস, লেবু, খেজুর ও ফলের দাম উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ভয়াবহ দুর্নীতির করালগ্রাসে নিমজ্জিত দেশে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি। সাধারণ মানুষ বেশি দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ছেড়ে অনেক মানুষ ফিরে গেছেন গ্রামেগঞ্জে। ফুটপাত, বস্তিতে ঠাঁই হয়েছে অনেক মানুষের।
যদিও ভোটচোর শেখ হাসিনা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকেই দুষছেন। অথচ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এখন প্রায় সব পণ্যের দামই কমছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। এখানে আওয়ামী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দফায় দফায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেটার আর কোনোদিন কমছে না। রোজা ঘিরে আওয়ামী ব্যবসায়ীদের লোভের আগুন আরও বেড়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, রোজায় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে তৎপর থাকবে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, গুদামে অভিযান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাজার সহনীয় রাখার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরাও আর দাম বাড়াবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দাম তো আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন, তার কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখন থেকে চিনি, তেল ও ছোলার দাম আর বাড়বে না।
এদিকে, কয়েক দিন ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্যগুলোর দাম বাড়তির দিকে। কারওয়ান বাজারে বাজার-সদাই করতে আসা রুম্মন আহমেদ বলেন, গত এক বছরের ব্যবধানে এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি। ৬৫-৭০ টাকার ছোলা এখন কিনতে হচ্ছে ৯০ টাকায়। মাছ, মাংসের দাম তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। রমজান মাস শুরু হলে পণ্যের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে বুঝতে পারছি না।
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭২ টাকায়। পাঁচ লিটার বোতল কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকা। রোজা শুরুর আগে বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। গত মাসেও দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ টাকায় বিক্রি হলেও গত দুই সপ্তাহ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়।
গত সপ্তাহ থেকে বাজারে চড়ছে লেবুর দাম। মাঝারি সাইজের অপরিপক্ব লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। মাসখানেক আগেও লেবুর ডজন কিনতে পাওয়া গেছে ৭০-৮০ টাকায়। খেজুর কিনতে এক ব্যক্তি জানালেন, দুই মাস আগে প্রতি কেজি মাবরুম খেজুর কিনেছি ৫০০ টাকা দরে। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। দুই কেজি কেনার ইচ্ছা থাকলেও এখন এক কেজি কিনে ঘরে ফিরছি।
মাসখানেক আগে জাহিদি খেজুর ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। খেজুর বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, গত বছর এই জাহিদি খেজুর বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ টাকা দরে।
আমদানি সংকটের কথা বলে দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখালেও সরেজমিনে, বাজারে ফলের কোনো সংকট দেখা যায়নি। ডলার সংকটকে সামনে এনে প্রতিটি ফলের দাম কেজিতে অন্তত ১০০-১২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। খুচরায় আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা কেজি ধরে। মাল্টার প্রতি কেজি ছুঁয়েছে ২০০ টাকার ঘর। নাশপাতি ৩০০ টাকা, আনার ৪৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ছুঁয়েছে ১০০ টাকা। কারওয়ান বাজারে নোয়াখালী ফল বিতানের বিক্রয়কর্মী শাহেদ বলেন, ফল-ভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ৮০-১৫০ টাকা।