দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের দাবি করে আসছিলেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ—অধিকাংশ সময় এমন যুক্তিতে সেই দাবির প্রতি সমর্থন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে কোনো দাবি ছাড়াই টাকার অবমূল্যায়ন হয়। ডলারের দাম ছুটেছে পাগলা ঘোড়ার মতো।
দুই বছর আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকার ঘরে। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেও ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৭০ টাকা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরে ডলারের দাম শতক ছাড়ায়। বর্তমানে প্রতি ডলারে দাম প্রবাসী আয়ের জন্য ১০৭ টাকা। আর রপ্তানিকারকদের জন্য ১০৩ টাকা।
গত এক বছরে ডলারের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে পাওয়ায় পণ্য রপ্তানিকারকেরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। কারণ, তাঁরা বিদেশে পণ্য রপ্তানির অর্থ পান ডলারে। আর শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, কারখানার ভাড়া ইত্যাদি পরিশোধ করেন দেশীয় মুদ্রা টাকায়। যদিও পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জামের অধিকাংশ ডলারে আমদানি করতে হয়।
ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারকেরা কতটা লাভবান হয়েছেন, তার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ডলারের বেশি দামের কারণে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা বেশি আয় করেছে। এই সময়ে তাদের মোট আয় ছিল ৮০১ টাকা।
বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮০ শতাংশের ওপর। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৪২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ডলারের দাম গত বছরের ফেব্রুয়ারির মতো ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা থাকলে পোশাক রপ্তানিকারকেরা পেতেন ৩৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে ডলারের দাম ১০৩ টাকা হওয়ায় তাঁরা পাবেন ৪৫ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসেই ৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা বাড়তি পাচ্ছেন পোশাকমালিকেরা।
চট্টগ্রামের এক পোশাক রপ্তানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রয়াদেশ কমে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণেও উৎপাদন ব্যাহত। আবার কাঁচামালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এসব চ্যালেঞ্জ না থাকলে শুধু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পোশাকমালিকেরা ব্যাপক মুনাফা করতেন।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহদাৎ হোসেন বলেন, ‘১০০ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি করলে ৭০ ডলারই কাঁচামাল, রাসায়নিক ও সরঞ্জামের পেছনে ব্যয় হয়। ফলে মাত্র ৩০ ডলারে আমরা বাড়তি টাকা পাচ্ছি। যদিও গত এক বছরে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। অন্যদিকে আমাদের প্রতিযোগী দেশ পাকিস্তানে ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩১ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরও আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমেছে।’