ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গতকাল সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক।
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নুরুল বলেছেন, ‘সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তার পরিণতি তোমাদের জন্য ভালো হবে না।’
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নুরুল হক এই হুঁশিয়ারি দেন৷ ‘২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রভাতফেরিতে ঢাকা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বালন’ শীর্ষক এই কর্মসূচির আয়োজন করে যুব অধিকার পরিষদ।
নুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো জনতা যখন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ‘গুন্ডারা’ তখন নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন। আগত সাধারণ মানুষকেও তাঁরা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। এতে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকা কলেজে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। টাঙ্গাইলে আমাদের নেতা-কর্মীদের ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।’
নুরুল বলেন, ‘বাগেরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন সরদার ছাত্র অধিকার পরিষদের এক নারী সদস্যকে লাঞ্ছিত করেছেন। শেরপুরের নকলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
সরকারের সমালোচনা করে নুরুল হক বলেন, ‘দেশের রাজনীতি থেকে প্রশাসন—সব জায়গায় তারা দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়েছে। সারা দেশে তারা একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, যাতে মানুষ তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে আমরা বলে দিতে চাই, তোমরা যেভাবে আমাদের ভাইদের রক্তাক্ত করছ, বোনদের লাঞ্ছিত করছ; সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তার পরিণতি তোমাদের জন্য ভালো হবে না।’
বর্তমান সরকার জাতির সামনে মশকরা করছে উল্লেখ করে নুরুল অভিযোগ করেন, প্রবাসে থেকে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই সরকারের অথর্ব মন্ত্রী, মানব পাচারকারী সাংসদ ও আত্মীয়েরা টাকা পাচার করতে গিয়ে ধরা খেলেও তাঁদের আঁতে ঘা লাগে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৯৬ জনের দুর্নীতি ধরেছেন বলে দুদকের কর্মকর্তা শরিউ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই সরকার দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষক।
নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে গঠিত সার্চ কমিটিরও কড়া সমালোচনা করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, ‘একদল আওয়ামী দালাল দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করা হয়েছে। একটা নাটক মঞ্চায়নের জন্য তারা কিছু রিহার্সেল করছেন, “আমরা সবার মতামত নিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীন এই ব্যক্তিরা তাঁর বাইরে যেতে পারবেন না৷ এই প্রধানমন্ত্রী আজ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন।’
কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, গণসংস্কৃতি পরিষদের সমন্বয়ক শওকত হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খান ও ফারুক হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।