ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করতে পারে আইএমএফ

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করতে পারে আইএমএফ.

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিপালনের জন্য মোটাদাগে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছাড়া অন্য সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। রিজার্ভের ঘাটতিও খুব বেশি নয়, তাই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগামী ২৪ এপ্রিল ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি মিশন। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে তাদের টানা ১৬ দিনের সিরিজ বৈঠক চলবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত।

আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা।

প্রাথমিকভাবে আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে নীট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রিজার্ভ বড় ধরনের উন্নয়নের উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়। তার পরও বাংলাদেশ এ লক্ষ্য থেকে ৫৮ মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল।

দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুন পর্যন্ত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। তখনও লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। জুন শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন। এ ছাড়া তখন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। এর পর দ্বিতীয় কিস্তির আগে আসা মিশনকে এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে যৌক্তিকতা যথাযথভাবে বোঝাতে সমর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পায় বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আইএমএফের ঋণের ১০টি শর্তের ৯টি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। জানা গেছে, তৃতীয় কিস্তির জন্য নির্ধারিত ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। সরকার ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।

ঋণের আরেকটি শর্ত হলো বাজেট ঘাটতি যেন ৯০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বেশি না হয়। ডিসেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণের দুটি শর্ত হলো, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের সামাজিক ব্যয় ও মূলধন বিনিয়োগ হতে হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার এ দুই খাতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারকে দেওয়া রিজার্ভ মানি লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়েছে।

এ ছাড়া তৃতীয় কিস্তির জন্য আইএমএফের কিছু কাঠামোগত শর্তও ছিল। এ শর্ত পূরণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির ত্রৈমাসিক তথ্য প্রকাশ করা শুরু করেছে। সংসদে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন এবং ফিন্যান্স কোম্পানি আইন পাস হয়েছে এবং আইএমএফের সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইনগুলো এরই মধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার মার্চ মাসে পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলোর জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এরই মধ্যে দু’বার সমন্বয় করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে চলমান সম্মেলনে এক ব্রিফিংয়ে গতকাল শনিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এটা সত্য যে বাংলাদেশে বিনিময় হার ও রিজার্ভের অবস্থান ততটা উন্নত হয়নি। এর ওপর জাতীয় নির্বাচনের প্রভাবও থাকতে পারে। মুদ্রাবিনিময় হার আরও বাজারভিত্তিক করা গুরুত্বপূর্ণ।

সমকাল