ঢাকা
লচ্চিত্রের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সিনেমা হলগুলোর জন্য চলতি বছরের গোড়ার দিকে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তহবিল থেকে সিনেমা হল সংস্কার, আধুনিকায়ন ও নতুন হল নির্মাণে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল। অবশ্য সেই তহবিল থেকে এখন ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন সিনেমা হল মালিকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, নতুন সিনেমা হল নির্মাণ, বিদ্যমান হলের সংস্কার ও আধুনিকায়নে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। একই ভবনে একটি প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিমালিকানাধীন (একক বা যৌথ) সিনেপ্লেক্সের যতগুলো পর্দা বা স্ক্রিন থাকুক না কেন, তা পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণপ্রাপ্তিতে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচিত হবে। এরূপ নতুন একটি ইউনিট স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। আর একটি ইউনিট সংস্কারে মিলবে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ঋণ। তবে ঋণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্সের আসনসংখ্যা কমপক্ষে ১০০ হতে হবে।
বিভাগীয় শহরের জন্য এই ঋণের সুদের হার ৫ ও এর বাইরের এলাকার জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ। আর এই ঋণ শোধ করা যাবে আট বছর পর্যন্ত। প্রথম বছরে ঋণ পরিশোধে ছাড় মিলবে (গ্রেস পিরিয়ড)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভাড়া ও ইজারা নেওয়া ভবনে বিদ্যমান অথবা নতুন সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স সংস্কার বা নির্মাণের জন্য ঋণ পেতে ভবন মালিকের সঙ্গে ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছর বেশি হতে হবে।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক সিনেমা হলগুলোর জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন বলা হয়, বিভাগীয় শহরের জন্য এই ঋণের সুদের হার ৫ ও এর বাইরের এলাকার জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ। আর এই ঋণ শোধ করা যাবে আট বছর পর্যন্ত। প্রথম বছরে ঋণ পরিশোধে ছাড় মিলবে (গ্রেস পিরিয়ড)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের অবদান অপরিসীম। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্পী ও কলাকুশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চলচ্চিত্রশিল্পে নবজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। সুস্থ জাতি গঠনে নির্মল বিনোদনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বিনোদন জগতের সর্ববৃহৎ মাধ্যম চলচ্চিত্র। সিনেমা হলকে কেন্দ্র করেই মূল চলচ্চিত্রশিল্প বিকশিত হয়। নব্বইয়ের দশকে এ দেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ সিনেমা হল ছিল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের সুস্থ ধারার বিনোদন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রেক্ষাগৃহগুলো সংস্কার এবং আধুনিক মানের নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সিনেমা হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা হলে সিনেমা হল মালিকেরা নতুন নতুন সিনেমা হল নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যমান হল সংস্কার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে সক্ষম হবেন। সার্বিক বিবেচনায়, সিনেমা হল মালিকদের ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে এই পুনঃ অর্থায়নের অর্থ দেবে। প্রথম ধাপে বিতরণ করা ৫০০ কোটি টাকা ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সিনেমা হল সংস্কার, আধুনিকায়ন ও মেশিনারি, যন্ত্রাংশ, প্রযুক্তি ক্রয় ও নতুন হল নির্মাণের জন্য এই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে বিদ্যমান সিনেমা হলের পাশাপাশি নতুনভাবে নির্মিত সিনেমা হলও ঋণ সুবিধা পাবে। তবে চলতি মূলধন বাবদ কোনো ঋণ দেওয়া হবে না। এ ছাড়া এই তহবিলের থেকে ঋণ নিয়ে কোনোভাবেই অন্য কোনো ঋণের দায় শোধ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে এই পুনঃ অর্থায়নের অর্থ দেবে। প্রথম ধাপে বিতরণ করা ৫০০ কোটি টাকা ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।
জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মূলত এই ঋণ প্রদান করবে, এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃ অর্থায়ন নিতে পারবে। আর সময়মতো ঋণ শোধ না করলে ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিচার-বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে এই ঋণ দিতে হবে।