আন্দোলনে ভিন্ন মাত্রা আনতে চায় বিএনপি

mzamin

facebook sharing button২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলার পর থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে বিএনপি। তিনদফায় চারদিন হরতাল ও ১০ দফায় ২০ দিন অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। তবে এবার আন্দোলনে ভিন্নতা আনতে চাইছে নির্বাচন বর্জন করে রাজপথে থাকা বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি। টানা হরতাল-অবরোধ দেয়ার কারণে আন্দোলন কর্মসূচিতে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে এমন চিন্তা থেকে সামনে ভিন্নধর্মী কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে ভাবছেন নেতারা।
 

শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস পালনের পাশাপাশি মাঝখানের বিরতিতে ভিন্নমাত্রার কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

নেতারা মনে করেন, এতে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা বাড়বে। এ ছাড়া জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে একমঞ্চে তুলে বৃহৎ আন্দোলনের জোট গড়ার চেষ্টাও আছে। যদিও জামায়াতকে নিয়ে অস্বস্তি দেখিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে গত রোববার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আগামী ১০ই ডিসেম্বর নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে প্রশাসনের অসহযোগিতা করলে প্রেস ক্লাবের সামনে গুম-খুন ও কারাবন্দি নেতাদের স্বজনদের নিয়ে কর্মসূচিটি পালনের বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রশাসনের আচরণের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে।

ওইদিন বাধা দিলে পরের দিন থেকে হরতাল-অবরোধ দেয়া হতে পারে। তবে বাধা না দিলে ভিন্ন চিন্তা করবে বিএনপি। সারা দেশে গণমিছিল ও ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ওদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাবে বিএনপি’র প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মানবজমিনকে জানান, আগামী ১৭ই ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত চলমান কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। মাঝখানে দুটি জাতীয় দিবস পালন করবে বিএনপি। ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত চূড়ান্ত ধাপে ফের কঠোর কর্মসূচি দেয়া নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।

জামায়াতকে একমঞ্চে তোলা নিয়ে জোটে অস্বস্তি: গত কয়েকদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি দল ছাড়াও জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে একমঞ্চে নিয়ে কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করছিল বিএনপি। ইতিমধ্যে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে দুদফা বৈঠকও করেছে দলটি। তবে গণঅধিকার পরিষদ (নুর), ১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোট আগ্রহ দেখালেও অস্বস্তি প্রকাশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। অনীহা দেখিয়েছে ইসলামী আন্দোলনও। জোটের একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতকে বাইরে রাখার শর্তে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে এসেছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। এখন জামায়াতকে আন্দোলনের একমঞ্চে তুললে সরে দাঁড়াবে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা আলাদা কর্মসূচি পালন করবে। ওদিকে ইসলামী আন্দোলনও জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠতে এখনো রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, একমঞ্চে জোটবদ্ধ আন্দোলনের চিন্তা যদি বিএনপি করে থাকে তাহলে সেটা হবে তাদের বড় ধরনের কৌশলের পরিবর্তন। কারণ ইতিপূর্বে তারা দীর্ঘসময় ধরে ২০ দলীয় জোটভুক্ত হয়ে আন্দোলন করেছিল, এমনকি এর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে নির্বাচনেও গিয়েছিল। কিন্তু সাফল্য পায়নি। পরবর্তীতে একটা সময়ে এসে তারা ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট বাদ দিয়ে যুগপৎ কৌশল গ্রহণ করে। এখন আবার কীসের ভিত্তিতে তারা একমঞ্চ বা জোটের কথা ভাবছে তা বোধগম্য নয়।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ওপর চলছে চরম অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন। বিএনপি’র গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমানোর জন্য সরকার পুলিশকে দিয়ে ন্যক্কারজনকভাবে গ্রেপ্তার চালাচ্ছে। তবে সব সময় কায়েমি স্বার্থবাদীদের বিরুদ্ধে নৈতিক আন্দোলন বৃথা যায় না। আমাদের আন্দোলনও বৃথা যাবে না।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলন সরকারের সাজানো প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে চলতেই থাকবে। আমরাই ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১০ই ডিসেম্বর দেশব্যাপী সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছি। সামনে ১৪ই ডিসেম্বর রয়েছে বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। আমাদের এই দিনগুলো বিশেষ কর্মসূচি প্রতি বছর যেভাবে পালিত হয়, আশা করি এ বছর সরকার তাতে কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। আমাদের আন্দোলনের বর্তমান পর্যায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত চলবে এবং আমরা আন্দোলনে চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকারের একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যানে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না আমরা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারি।

মানব জমিন