ফাহিমের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
বাংলাদেশের মাদারীপুরে একজন কলেজ শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত জঙ্গি ফাইজুল্লাহ ফাহিমের, পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে চালানো একের পর এক হত্যাকাণ্ডের মতো একই কায়দায় শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা চালানোর সময় গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মনে করা হচ্ছিল, তার কাছ থেকে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর চব্বিশ ঘন্টার মাথায় সে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হবার পর এ নিয়ে বাংলাদেশে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এই হত্যা বড় কোন কিছুকে আড়াল করার চেষ্টা নয়তো?
মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর উপর গত বুধবার চাপাতি নিয়ে হামলা করার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা ধাওয়া করে ধরে ফেলেছিল হামলাকারীদের একজন গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে।
তাকে পুলিশ সোপর্দ করার পর শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে রিমান্ডে দশদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমোদন দেয় পুলিশকে।
সেই রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হওয়ার পর চব্বিশ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে পুলিশের কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হল ফাহিম।
ধারণা করা হচ্ছিল এতদিন ধরে যেসব ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডসমূহ ঘটে আসছে, ফাহিমকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই প্রথম সেসব হত্যাকাণ্ডের একটি যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল এবং জঙ্গিদের কাজের ধরণ, মনস্তত্ব, উদ্দেশ্য, প্রণোদনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল, যা শেষ হয়ে গেল সে নিহত হবার মধ্যে দিয়ে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান লিটন বলছেন আটক ফাহিম ৫/৬ জন সহযোগীর নাম দিয়েছিল এবং তাকে অবজারভেশনে রাখতে পারলে হয়ত আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারতো।
‘‘যেহেতু জঙ্গীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের তথ্যভাণ্ডারে খুব বেশি তথ্য নেই, তাই মনে করেছিলাম যেহেতু ঘটনা ঘটানোর সময়ই প্রায় বলতে গেলে সে ধরা পড়েছে, তার কাছ থেকে হয়ত অনেক তথ্য আগামী দশ দিনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাবে।’’
পুলিশের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল অাটক ব্যক্তির নিরাপত্তার বিষয়টা – সেটি তারা কতটুক নিয়েছেন সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে বিবিসি বাংলার আহরার হোসেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন নূর খান লিটন।
তিনি বলেন পুলিশ রিমাণ্ডে থাকা অবস্থায় হাতে নাতে ধরা একজন অভিযুক্ত জঙ্গির ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হবার ঘটনা্র নজিরবিহীন।
‘‘রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ার এর আগেও হয়েছে কিন্তু এটা একেবারেই নজিরবিহীন- ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তার জীবনাবসানের ফলে অনেক কিছুই অনুদ্ঘাটিত থেকে যাবে। জনমনে সন্দেহ থেকে যাবে বড় কিছুকে আড়াল করার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে কীনা।’’
তিনি বলেন যে জনগণ পুলিশকে সাহায্য করল অপরাধীকে তাদের হাতে তুলে দিতে, তাদের ইচ্ছা ছিল যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিচার হোক যাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তার মৃত্যু জনমনে অনেক প্রশ্ন ও সন্দেহ আনবে।
‘‘স্বাভাবিকভাবে এভাবে জঙ্গি দমনে সফলতা খুব একটা আসবে না, বরং এধরনের ঘটনায় হিতে বিপরীত হতে পারে,’’ বলেন নূর খান লিটন।
ফাহিমের মৃত্যুর পর পুলিশ ঘটনার যে বিবরণ দিচ্ছে, সেই একই বিবরণ পূর্ববর্তী অসংখ্য কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পাওয়া গেছে।
তবে মাদারীপুরের পুলিশ প্রধান সরোয়ার হোসেন বিবিসিকে বলছেন, ফাহিম তার সহযোগীদের নাম এবং আড্ডাস্থল বলেছিল, এবং তাদের ধরতে ফাহিমকে নিয়েই পুলিশ সেখানে গিয়েছিল।
‘‘সে ভোরবেলা নামাজের সময় বন্ধুদের চিনিয়ে দেবার কথা বলেছিল। ৭টা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে গেলে ওর সহযোগীরা পুলিশের গাড়িতে গুলি করে- গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়- একজন সদস্য আহত হয়- আমরা পরবর্তীতে পাল্টা গুলি করি।’’
তিনি বলেন এই বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় এবং দুপক্ষে বন্দুকযুদ্ধ চলে।
‘‘ওরা পাটক্ষেতের ভেতরে ঢুকে যায়। আমরাও ছড়িয়ে পড়ি এবং সুযোগ পেয়ে তারা পাটক্ষেত ও জঙ্গলের দিকে পালাতে থাকে। ফাহিমও পালাতে উদ্যত হয়। অনেক পর গণ্ডগোল থামলে ওকে আমরা আহত অবস্থায় পাই। এরপর হাসপাতালে নিলে ওকে মৃত ঘোষণা করা হয় – আমরা সেখানে অস্ত্র ও গুলি পাই।’’
নিহত ফাহিমের যেসব ছবি গণমাধ্যমে বেরিয়েছে তাতে অবশ্য তার হাতে হাতকড়া লাগানো দেখা গেছে।
ফাহিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত কয়েকদিন ধরেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তাকে নিয়ে নানারকম তথ্য আসছিল, খবরে জানা যাচ্ছিল, ফাহিম ছিল ঢাকার উনিশ বছর বয়েসী এক কলেজ ছাত্র ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সদস্য, কয়েকদিন আগে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সে হামলাকারী হিসেবে মাদারীপুরে ধরা পড়ে, যা তার পরিবারের সদস্যদেরকেও বিস্মিত করে।
অবশ্য পরিবারের বরাত দিয়ে কোন কোন কাগজ ফাহিমকে ধর্মপ্রাণ এবং বন্ধুবান্ধব বিবর্জিত নি:সঙ্গ এক যুবক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কথিত ক্রসফায়ারে অভিযুক্ত জঙ্গি ফাহিমের নিহত হবার ঘটনা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আজ সারাদিনই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই নিয়ে মানুষজনকে নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে দেখা গেছে এবং বেশীরভাগ মানুষই বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি বিরোধী দলগুলোও এই ঘটনায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন বছরখানেক ধরে হত্যা ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দোষী যারা তাদের নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করার সুযোগ এই ঘটনায় নষ্ট হয়ে গেছে।
‘‘এতে সন্দেহের কুজ্ঝটিকা ও ঘনমেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে- এতে সরাসরিভাবে প্রমাণিত হল যে উগ্রবাদীদের কার্যকলাপের সঙ্গে সরকার জড়িত।’’
সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ও হামলার অভিযুক্তদের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। খবরে জানা যাচ্ছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকায় এক কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হয় যার একজন ওসমান ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠি জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামী। অপর নিহত ব্যক্তি কামাল ছিল বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যার মামলার অভিযুক্ত।
Source: BBC
There is no doubt that Fahim has been deliberately killed by the Police under the instruction of the higher ups and there can be no other reason but one – government (and perhaps its external backer) does not want truth behind the minority, blogger etc. killings to come out for this would reveal step-by-step plan of further colonization of Bangladesh that is very much in progress.