৫ বছরে সরকারের ঋণ বেড়ে হবে দ্বিগুণের বেশি

রাজস্ব আদায়ে নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি সরকারের ব্যয় নির্বাহে চাপ বাড়াচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে সরকারকে। কখনও এ ঋণ নেয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে, কখনও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। কখনও বা সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরাসরি জনগণের থেকেও ঋণ বাড়াচ্ছে সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণও নেয়া হচ্ছে। বাজেটের আকার যত বাড়ছে, ঋণের পরিমাণও তত বাড়ছে।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতেও ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বছর বছর। এতে পাঁচ বছরেই সরকারের ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছর সরকারের ঋণ দাঁড়াবে দুই দশমিক ১৩ গুণ বা ২১৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ২৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আর বিদেশি ঋণ ছিল চার লাখ ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর সরকারের ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল আট লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণ চার লাখ ৯১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছর সরকারের ঋণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় (সাময়িক হিসাব) ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত অর্থবছর বিদেশি ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আর বিদেশি ঋণ পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী তিন অর্থবছরের জন্যও সরকারের ঋণ প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছর সরকারের ঋণ বাড়তে পারে দুই লাখ ৫৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়াতে পারে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণ ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

প্রক্ষেপিত হিসাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ দাঁড়াতে পারে ২১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছর সরকারের ঋণ বাড়তে পারে দুই লাখ ৮৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়াতে পারে ১৩ লাখ সাত হাজার ১০০ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণ আট লাখ ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর সরকারের ঋণ বাড়তে পারে তিন লাখ ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়াতে পারে ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ-জিডিপি অনুপাত ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছর বেড়ে হবে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। একইভাবে বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৯ থেকে বেড়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছর দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও দুই ধরনের ঋণের অনুপাত পরিবর্তন হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর গিয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের অনুপাত কিছুটা কমবে ও বিদেশি ঋণের অনুপাত কিছুটা বাড়বে। তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের মোট ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছর গিয়ে হবে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ। অপরদিকে ২০২০-২১ অর্থবছর সরকারের বিদেশি ঋণের অনুপাত ছিল ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২৫-২৬ অর্থবছর যা দাঁড়াবে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

শেয়ার বিজ