২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে এখন থেকেই সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চাইছে বিএনপি। কারণ, আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে আর কোনো ভুল করতে চায় না দলটি। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বৈঠক এবং মিত্র দলগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এমন মত এসেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শান্তিপূর্ণ পথেই আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায় সরকারবিরোধীরা।
তবে আগামী দিনের কর্মসূচিতে সতর্কতার পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের ওপরও দৃষ্টি রাখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, তাঁদের কাছে তথ্য আছে, নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে একাধিক শরিক দলকে ‘লোভনীয় টোপ’ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকারের দিক থেকে এ ধরনের তৎপরতার আঁচ পেয়ে শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সামনের আন্দোলন-কর্মসূচির বিষয়ে তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও পরামর্শও চাওয়া হচ্ছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি মহল থেকে যে নির্বাচনী ‘টোপ’ দিতে পারে, সম্প্রতি জোটনেতাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয় ‘১২-দলীয়’ জোটের নেতাদের। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন এই জোটের বৈঠকে আলোচনার একপর্যায়ে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি কী, সেটি কৌশলে আলোচনায় আনেন তারেক রহমান।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন নেতা জানান, একজন রাজনীতিক কেন রাজনীতি করেন, তাঁর শেষ আকাঙ্ক্ষা কী থাকে, এমন বিষয়ে আলোকপাত করেন বিএনপির শীর্ষ নেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবীণ রাজনীতিক ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারের ‘জানাজায়’ কম মানুষের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। ওই নেতা মনে করছেন, এ ধরনের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব শরিক জোটের নেতাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে একজন রাজনীতিকের শেষ কথা হচ্ছে জনগণ। কোনো ‘লোভ’ বা ‘টোপে’ পড়ে জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গেলে এর পরিণতি কখনো ভালো হয় না।
উল্লেখ্য, উকিল আবদুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের সঙ্গে তিনিও পদত্যাগ করেন। কিন্তু এ আসনে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর আবদুস সাত্তার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনেন। পরে তাঁকে বিএনপি বহিষ্কার করে। ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি মারা যান।
বৈঠকে আলোচনার কথা নিশ্চিত করেন ১২-দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি মহল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে এ ধরনের প্রস্তাবের কথা তিনি শুনেছেন। উপমহাদেশের রাজনীতিতে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে বিষয়টি তাঁর নজরে এখনো আসেনি।
জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের দৃষ্টি ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিকে। তাঁরা যেকোনো মূল্যে ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চান। এ লক্ষ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতি সভা করছেন। এ ক্ষেত্রে ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার, মামলা, হামলাকে তাঁরা আমলে নিতে চাইছেন না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে কোথায় তাদের (বিএনপি) সমাবেশ করতে দেওয়া হবে, সেটা এখনো ঠিক হয়নি।
ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, বিএনপি পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে যে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। আর আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে, জামায়াত এখনো বিএনপির মিত্র হিসেবেই রয়ে গেছে। বিএনপি ও জামায়াত একই দিনে রাজপথে নামার ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যই প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে মিশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে জামায়াত। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিছুতেই তা হতে দেবে না।
প্রথম আলো