এক হাজার ৬৯ দিন (প্রায় ৩ বছর) পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় দণ্ডিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেন। তিনি গ্রেপ্তার হন ২০২০ সালের ১২ জুলাই। আর কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে গত ১৬ জুন বিকাল ৫টার দিকে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৫ জুন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেনকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
সবশেষ জামিন পাওয়ার দিন মাসুদুল হক জানান, এ মামলায় দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। বাকি মামলাগুলোতেও তিনি জামিনে আছেন। আজকে জামিন পাওয়ায় ডা. সাবরিনার মুক্তিতে বাধা নেই।
২০২২ সালের ১৯ জুলাই সাবরিনা শারমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।
রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
তিনটি ধারার সাজা পর পর কার্যকর হবে মর্মে রায়ে বলা হয়েছে। তাই তাদের ১১ বছর সাজাই খাটতে হবে বলে জানান মামলার আইনজীবীরা।
সাবরিনা-আরিফুল ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন আসামিরা।
২০২০ সালের ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।
অভিযোগ রয়েছে, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার। পরে ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে আরও মামলা হয়।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক। মামলার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জেকেজির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে সাবরিনা আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়।