চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কৌশল জানেন ভালো। বাংলাদেশে কীভাবে চাকরি টিকিয়ে রাখতে হয়, তাঁর চেয়ে ভালো জানা নেই কারও। তাই তো প্রথম মেয়াদের মতো দ্বিতীয় মেয়াদেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ‘ম্যানেজ’ করে চলেন তিনি। যে কারণে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি, টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইটে হতাশাজনক পারফরম্যান্স স্পর্শ করে না বোর্ড সভাপতিকে। এই ব্যর্থতার পরও কোচকে রেখে দেওয়া বোর্ডের দুর্বলতা হিসেবে দেখেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। তিনি মনে করেন, হাথুরুসিংহেকে এখনই বিদায় করার উপযুক্ত সময়।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই ধুঁকছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিম্নমানের ক্রিকেট প্রদর্শনী দেখে বিরক্ত ছিলেন সমর্থকরা। যদিও বিশ্বকাপে স্লো ও লো উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারায় বাংলাদেশ। তারাই এই সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে সুপার এইটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ক্রিকেট খেলে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেমির সমীকরণ অনুসরণ না করায় হাথুরুসিংহেকে ছেড়ে কথা বলেননি ফারুক আহমেদ, “শিক্ষক যখন নিজে স্বপ্ন দেখে না, ছাত্ররা স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? কোচের প্রথম ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ হলো– তিনি বাংলাদেশ দলের জন্য আনফিট। একজন মানুষ আমাদের লাথি মেরে চলে গেল, তাকে আবার হাতে-পায়ে ধরে আনা হলো। বিশ্বে কোচের এতই কি অভাব পড়েছে বারবার তার কাছে যেতে হবে? প্রথম মেয়াদে দলের পারফরম্যান্স যেটা ছিল, সেটা হাথুরুসিংহের জাদুতে নয়। ওই দলের সঙ্গে আরও লোকজন কাজ করেছে। এবার তো হাথুরু ‘ম্যাজিক’ কাজ করছে না।”
জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক মনে করেন, হাথুরুসিংহে দেশের ক্রিকেটের কাঠামো নষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সে (হাথুরু) ওয়ানডে দল ধ্বংস করে দিয়েছে। যেটা আমাদের সবচেয়ে শক্তির জায়গা ছিল। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে যেনতেন পারফরম্যান্স ছিল। টি২০তে খেলোয়াড়দের ফর্মে ফেরানোর দায়িত্ব সে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একজন ব্যাটারকেও ছন্দে ফেরাতে পারেনি। বিসিবির বোঝা উচিত, হাথুরু এখন বোঝা।’
ফারুকের মতে, হাথুরুর ইচ্ছায় অখ্যাত সব কোচ দিয়ে প্যানেল সাজিয়ে ভুল করেছে, ‘বোর্ড সবকিছু তাকে সুযোগ করে দিয়েছে। বিপিএলের খেলা হলে সে টিভি বন্ধ করে দেয়। মাঠে তো থাকেই না, আবার বলে টিভি বন্ধ করে দিই। সে দলকে রেজাল্ট এনে দিলে আমি এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতাম না। ধরে নিতাম এটাই তার স্টাইল। আসলে তার মতো মানহীন কোচ তো চাতুরতা দিয়েই টিকে থাকার চেষ্টা করবে।’
ওয়ানডে ও টি২০ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচনায় হাথুরুসিংহেকে এখনই বিদায় করে দেওয়ার পক্ষে ফারুক আহমেদ, ‘কোনো যৌক্তিকতা নেই হাথুরুকে রাখার। এখনই কোচ খোঁজা উচিত। টি২০ বিশ্বকাপে তার যে ভূমিকা ছিল, তাতেই বাদ দেওয়া উচিত।’
জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক আফগানিস্তানের কাছে হারকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না, ‘আমাদের জিরো থেকে হিরো হওয়ার সুযোগ ছিল। সেমিফাইনাল খেলা যেত। সেটা তো হলোই না, উল্টো ম্যাচ হেরে গেল। অথচ মাহমুদউল্লাহ আউটের পর ৪৯ বলে ৩৫ রান করতে হতো জিততে। সে মুহূর্তে রিশাদ গিয়ে স্লগ সুইপ খেলে আউট। এ থেকে পরিষ্কার, পরিকল্পিত কোনো গেম প্ল্যান ছিল না।’
বিসিবির সাবেক এ প্রধান নির্বাচকের মতে, দেশের ক্রিকেটের উন্নতি না হলেও হাথুরুসিংহের সমস্যা নেই। তিনি মোটা টাকার বেতন নিয়ে চুক্তি শেষে চলে যাবেন। তাকে আর এই সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না বলে জানান ফারুক আহমেদ।
samakal