- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, কাতার থেকে
- ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:১৬, আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:১৭
কোর্য়াটার ফাইনালে গতকাল ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিলের পরাজয়ের কারণে এবার আর দেখা হলো চির প্রতিদন্দ্বী আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল স্বপ্নের ম্যাচ। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারের পর খুশি হয়েছিলেন ব্রাজিলের সাংবাদিকরা। গতকালকে ব্রাজিলের হারের পর খুশিতে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে ভুলে যাননি আর্জেন্টিনার মিডিয়া কর্মীরা।
দুই সিনিয়র সাংবাদিককে বলাবলি করছিলেন, তাহলে আর্জেন্টিনার ফাইনালে খেলতে আর বাধা নেই। ল্যাতিন এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক খুব ভালো হলেও ফুটবলে চির শত্রু। তাই একের হতাশার দিনে অন্যের দাঁত কেলিয়ে হাসা। তবে ক্রোয়েটদের কাছে ব্রাজিলিয়নাদের হারে স্বপ্নের এক সেমিফাইনাল থেকে বঞ্চিত হলো ফুটবল বিশ্ব। কাতার বিশ্বকাপের কোর্য়াটার ফাইনালে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিজেদের ম্যাচে জিতলে ১৩ তারিখে লুসাইলে দেখা হতো এই দুই দলের। মেসিরা ঠিকই টাইব্রেকারে ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষ ডাচদের হারালেও সেই স্পট কিকেই ব্যর্থ নেইমাররা। তাই হলো না সেমিতে এই দুই ফুটবল পরাশক্তির দেখা। আসলে আর্জেন্টিনার আছে টাইব্রেকার ঠেকানো গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ব্রাজিলে নেই এমন কিপার। সে কারণে হার।
ব্রাজিলের গোল রক্ষক এলিসন বাকেরের মতোই ইংলিশ লিগে খেলেন মার্টিনেজ। বাকেরের ক্লাব লিভারপুর। মার্টিনেজ আছেন অ্যাস্টন ভিলায়। গতকাল রাতে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার টাইব্রেকারের সময় একেবারেই হতাশ করেছেন এলিসন বাকের। প্রতিপক্ষের ৪ একটি শটও ঠেকানো সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। উল্টো ব্রাজিলের রদরিগো এবং মার্কুইনস ব্যর্থ গোল করতে। রদরিগোর শট ঠেকান বলকান অঞ্চলের গোলরক্ষক। মার্কুইনসের শট লাগে পোস্টে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নেদারল্যান্ডসের প্রথম দুটি শটই রুখে দেন। ফলে এনজো ফার্নান্দেজের শট বাইরে গেলেও আর্জেন্টিনার জিততে সমস্যা হয়নি মেসি, পারেদেস, মনতিয়েল এবং লাউতারো মার্টিনেজরা গোল করায়। এই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ গত বছর কোপা আমেরিকায় সেমি ফাইনালে কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান।
আসলে টাইব্রেকার নামের ভাগ্য জিততে যোগ্যতা ও দক্ষতাও লাগে। লুসাইল স্টেডিয়ামে এই স্পক কিকের সময় সব কিছুই ছিল লিওনেল স্ক্যালোনির দলের পক্ষে। যা ব্রাজিলকে ভর করেনি। ফলে এক ল্যাতিন দেশ সেমিতে গেলেও অন্যটিকে ফিরতে হচ্ছে প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে।
৫ ডিসেম্বর রাতে পরপর দুই ম্যাচে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল এশিয়ার দুই দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। পরশু রাতে সেই পরিনতিই বরণ করতে যাচ্ছিল দুই ল্যাতিন দেশ। মিলে যাচ্ছিল সব কিছুই। ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনাও লিড নিয়ে তা ধরে রাখতে পারেনি। পার্থক্য হলো আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ ৯০ মিনিটে ২-২ হয়। আর ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার ১-১ স্কোর লাইন অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। দুই খেলাই গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত সফল আর্জেন্টিনা। এতে আর্জেন্টিনার এমি মাটিনেজ হিরো। আর কোনো টাইব্রেকারে ঠেকাতে না পারার দুর্নাম নিয়ে কাতার ছাড়তে হচ্ছে এলিসন বাকেরকে। অবশ্য ব্রাজিলের সাথে আর্জেন্টিনার বিদায় হলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপও শেষ হয়ে যেত। বাংলাদেশীরাতো বিশ্ব ফুটবলে এই দলের সমর্থনে বিভক্ত।
গতকাল রাতে ভিন্ন দুই স্টেডিয়ামে দুই মাইল ফলক স্পর্শ মেসি ও নেইমারের। ডাচদের বিপক্ষে গোল করে মেসি এখন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে ১০ গোল করা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সমকক্ষ। আর নেইমার ক্রোয়েশিয়ার জালে বল পাঠিয়ে ছুলেন জাতীয় দলের হয়ে করা পেলে ৭৭ গোলকে। এই মাইল ফলক স্পর্শ করার রাতটা মেসি ভালোভাবে উদযাপন করতে পারলেও নেইমারকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে কাঁদতে কাঁদতে।
বিশ্বকাপে খুব কমই দেখা হয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। ১৯৯০ সালের ইতালী বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তাদের সর্বশেষ দেখা। সেই আসরে ম্যারাডোনার পাসে ক্লাউডিও ক্যানিজিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা ১-০তে হারিয়েছিল ব্রাজিলকে। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে দেখা হওয়ার কথা ছিল এই দুই চির শত্রুর। সেমিতে মেসিরা নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারালেও ব্রাজিল ১-৭ গোলের লজ্জ্বাজনক হার বরণ করে জার্মানির কাছে। ফলে ফাইনালে আর দেখা হয়নি। ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে অবশ্য ব্রাজিল ৩-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। সে ম্যাচে লাল কার্ড পান ম্যারাডোনা।