স্বল্প মানের কম দামি ডিজেল আমদানিতে সম্মতি

Transparent Newspaper Clipping Clipart - Prothom Alo Logo ...

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা

এ বিষয়ে জানতে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হ‌ুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেননি। সভায় বিপিসি ও বিএসটিআই ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জরুরি প্রয়োজনে অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করতে পারবে বিপিসি। তবে তা বাজারজাতকরণের সময় বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মানের (৩৫০ পিপিএম) মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।

পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, চীনসহ উন্নত দেশগুলো ১০-১৫ পিপিএম সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার করে। এমনিতেই আমাদের পরিবেশে সালফারের উপস্থিতি অনেক বেশি। এখন ৫০০ পিপিএমের বেশি মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল আনা হলে তা পরিবেশের ক্ষতি বাড়িয়ে দেবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বর্তমানে ৫০ পিপিএম মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানির অনুমতি রয়েছে। আর তেল পরিশোধনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে যে ডিজেল উৎপাদিত হয়, তার পিপিএমের মাত্রা অনেক বেশি। সব মিলিয়ে দেশের বাজারে ৩৫০ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত সালফারযুক্ত ডিজেল বিক্রি করার অনুমতি দেয় বিএসটিআই।

ডলার সাশ্রয়ের জন্যই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫০ পিপিএমের পরিবর্তে ৫০০ পিপিএমের বেশি মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করতে চায় বিপিসি। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের ডিজেল আমদানি করা হলে বছরে প্রায় ২০ কোটি ডলার বা ২০০ কোটি (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে) সাশ্রয় হবে।

সাধারণত ডিজেলে সালফারের মাত্রা যত কম হয়, সেটি তত কম পরিমাণে পরিবেশ দূষণ করে। বিশ্ববাজারে কম পিপিএমের ডিজেলের দাম বেশি। দূরপাল্লার গাড়ি ও জেনারেটরে কম পিপিএম তথা বেশি দামি ডিজেল ব্যবহৃত হয়। আর বিভিন্ন নৌযান, সেচ যন্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি পিপিএমের তথা কম দামি ডিজেল ব্যবহার হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের গতকালের সভায় উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিপিসি বলেছে ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাদের যে চুক্তি রয়েছে তাতে ৫০ পিপিএমের বেশি মাত্রার ডিজেল আমদানির প্রয়োজন হবে না। তবে আসন্ন বোরো সেচের মৌসুমে ডিজেলের ব্যবহার বেড়ে যাবে। তখন যেন ডিজেলের সংকট না হয়, এ জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজেল আমদানির সুযোগ রাখতে বেশি পিপিএমের ডিজেল আমদানির সুযোগ চেয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিপিসি ১০ থেকে ৫০ পিপিএম পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করে। এখন শুধু এই আমদানির ক্ষেত্রে মান মাত্রার শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

ফলে এখন তারা যেকোনো উচ্চমাত্রার ডিজেল আমদানি করতে পারবে। তবে ডিপোতে আনার পরে এসব ডিজেল কম মাত্রার ডিজেলের সঙ্গে মিশ্রণ করে ৩৫০ পিপিএমের মধ্যে এনে তারপর বাজারে বিক্রি করতে পারবে। বাজারে বিক্রির আগে বিএসটিআইয়ের সনদ নিতে হবে।

জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, যদি বাজারজাতকরণের সময় বিএসটিআইয়ের মান বজায় রাখা যায়, তাহলে বেশি সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করা যেতে পারে। তবে মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে।