দুই যুগ ধরে টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় বিচরণ করছে বাংলাদেশ। একটা জায়গায় অপূর্ণতা ছিল। গতকাল সেই অপূর্ণতা ঘুচালেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
তাঁর এই অর্জন দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় থেকে শুরু করে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিমরা প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সৈকতকে। তাঁর এই অর্জন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
সৈকতকে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাশরাফি লিখেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে লাল-সবুজের পতাকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন এক সময়। কতো ম্যাচ খেলেছি, আপনি অনফিল্ড আম্পায়ার থেকেছেন। কিন্তু আজ যেটা করলেন সত্যিই অসাধারণ। কল্পনায়ও কোনোদিন ভাবিনি আমাদের দেশের কেউ এলিট প্যানেলে জায়গা পাবে। অভিনন্দন সাথে শুভকামনা সৈকত ভাই!’
সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার অনেক দিন ধরেই দেশের সেরা আম্পায়ার। আইসিসি আম্পায়ারদের ‘এমার্জিং’ প্যানেলেরও ওপরের দিকে ছিলেন অনেক দিন ধরেই। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার মারাইস এরাসমাস অবসরে যাওয়ায় এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সৈকতের। গতকাল এক বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে নেওয়ার খবর জানায় আইসিসি। সে বিবৃতিতে সৈকতকে শুভেচ্ছা জানান আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস।
ভারতে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে পারফরম্যান্স করেছিলেন, যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন, এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে সেটির পুরস্কার বলেই মনে করছেন সৈকত, ‘বিশ্বকাপে ৫টি ম্যাচ পরিচালনা করি, যার প্রতিটি ছিল ঘটনাবহুল। বিশ্বকাপে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল আফগানিস্তান-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ। বিশ্বকাপে আমি একটা ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলাম, প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে বিশ্বকাপে গিয়ে নার্ভাস ছিলাম না। আমার মনে হয়, এর পুরস্কারই আজকের এই অর্জন।’
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে সৈকতের বিচরণ সেই ১৯৮৯ সালে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফির দলেও ছিলেন বাঁহাতি এ স্পিনার। কিন্তু সেবার বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়। ১৯৯৭ সালে পিঠের চোটের কারণে স্কোয়াডে জায়গা পাননি তিনি। সেবার আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
সেই আনন্দের ক্ষণে তাঁর মাঝে একটা দুঃখবোধও কাজ করে। ফিট থাকলে এ জয়ের অংশীদার হতে পারতেন তিনি, বিশ্বকাপও খেলতেন। তখন নাকি তাঁর মনে হয়, আম্পায়ারিং করলে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করতে পারবেন, বাংলাদেশ টেস্ট খেললে সেটা পরিচালনা করতে পারবেন। সে চিন্তা থেকেই আম্পায়ারিংয়ে আসা। ২০১০ সালে ঢাকার মাঠে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজের আইডল সাইমন টোফেলের সঙ্গী হিসেবে আন্তর্জাতিক পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি।
এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দিনে প্রথম আম্পায়ারিংয়ের স্মৃতিচারণও করেছেন সৈকত, ‘ধানমন্ডি ৮ নম্বর মাঠে তৃতীয় বিভাগ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচে প্রথম আম্পায়ারিং করেছিলাম। তখন তো অতো নিয়মকানুন জানতাম না। একটা বলে ওয়াইড-বাই উভয় সংকেতই দিয়েছিলাম সেদিন। সেখান থেকে শুরু। এরপর তো অনেক অভিজ্ঞতা হলো।’
এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পেছনে সৈকতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও বড় ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক ও মাস্টার্স করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ভবিষ্যতে যারা আম্পায়ারিংয়ে আসতে চান, তাদের প্রতি বার্তাও দিয়েছেন সৈকত, ‘আপনি জনপ্রিয় হতে পারবেন না। আপনাকে এমন একজন হতে হবে, যাকে অন্যরা সম্মান করে। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে লক্ষ্যটা স্থির রাখতে পারলে সাফল্য আসবেই।’
samakal