ঢাকা
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে গত বছর শেষে সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা ছিল যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ অর্থ জমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা সুইস ফ্রাঁতে যার পরিমাণ ৩৭ হাজার ৫২১ কোটি।
প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাংলাদেশের পাঁচটি বাজেটের চেয়ে বেশি অর্থ যুক্তরাজ্যের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাংলাদেশের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
যুক্তরাজ্যের পর সুইস ব্যাংকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। দেশটির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার ৭৩৩ কোটি সুইস ফ্রাঁ জমা রয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এসএনবি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ২১৬টি দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে সুইস ব্যাংকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৮ কোটি সুইস ফ্রাঁ। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বা প্রায় এক-তৃতীয়াংশই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের। সম্মিলিতভাবে এ দুই দেশের জমা অর্থের পরিমাণ ৫৪ হাজার ২৫৪ কোটি সুইস ফ্রাঁ।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদনে, সুইস ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমা হওয়া অর্থকে দায় হিসাবে দেখানো হয়েছে। ‘দায়’ হিসেবে দেখানোর মানে হচ্ছে, এ অর্থ গ্রাহক চাইলে ফেরত দিতে হবে। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৬১ সুইস ফ্রাঁ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।
সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হচ্ছে, দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে জমা অর্থের যে হিসাব সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়, তার সব অর্থ যে পাচারের অর্থ, তা নয়। বৈধভাবেও দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী নাগরিক ও তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে অর্থ রাখে। বিদেশে বসবাস করলেও যে নাগরিক যে দেশের পরিচয় ব্যবহার করে সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখেন, সেই অর্থকে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থ হিসেবে গণনায় ধরা হয়। তবে বৈধভাবে অর্থ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থও জমা হয় সুইস ব্যাংকে। এ কারণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন দেশের কত অর্থ জমা রয়েছে সেই পরিসংখ্যান দিলেও গ্রাহকের কোনো তথ্য প্রকাশ করে না।
এদিকে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সুইস ব্যাংকে লেনদেনকারী বা হিসাবধারী ২১৬ দেশের মধ্যে কয়েকটি দেশের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো অর্থই জমা নেই। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ এবং ওয়ালিশ অ্যান্ড ফিউচুনা। ২০২১ সাল শেষে এ দুই দেশের কোনো অর্থই জমা ছিল না সুইস ব্যাংকে। অথচ ২০২০ সালে ওয়ালিশ অ্যান্ড ফিউচুনার ৫৫ হাজার সুইস ফ্রাঁ জমা ছিল সুইস ব্যাংকে। আর ২০১৯ সালে পালাউয়ের ৯৭ হাজার সুইস ফ্রাঁ জমা ছিল সুইস ব্যাংকে।