সীমান্তপথে অমিক্রন ঠেকাতে কী করছে সরকার?

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০৯, আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:২৪

– ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৯২ জন। শনাক্তের হার চার দশমিক ২০ শতাংশ। এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন।

আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭৭৫ জন।

গত কিছুদিন ধরে এভাবেই একটু একটু করে রোগী সংখ্যা এবং শনাক্তের হার বাড়ছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার বলেছেন, অমিক্রন সংক্রমণের হার বিবেচনা করে তারা জরুরি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য সুপারিশ করেছেন।

সেটা সাতদিনের মধ্যেই জারি করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সীমান্তপথেসংক্রমণ ঠেকাতে সরকার কী করছে?

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো: আলমগীর বলেছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করা মানুষ এবং যানবাহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে থেকে ভারতে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে যাত্রী সংখ্যা প্রতিদিন ৩০০ জনে সীমিত করা হয়েছে।

সেই সাথে ভারত থেকে আসা ট্রাকের সহযোগীর সংখ্যাও কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই মূহুর্তে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারতে আসা-যাওয়া করে, স্বাভাবিক সময়ে ১০ হাজারের মত মানুষ আসা-যাওয়া করত কোনো কোনোদিন।

স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলমগীর বলেছেন, এখন আমরা এই সংখ্যা ৩০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করছি। আর আগে পণ্যবাহী ট্রাকের চালকের সাথে দুইজন সহকারী আসতে পারত, সেটা এখন থেকে একজন হবে।

এছাড়াও স্থলবন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত কোভিড-১৯ শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মূহুর্তে যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য বেনাপোল, বুড়িমারী এবং আখাউড়া-এই তিনটি স্থলবন্দর খোলা রয়েছে।

জেলায় জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে, প্রস্তুতি কম
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

ভারতে গত কিছুদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, যে কারণে সীমান্তপথ হয়ে সেখান থেকে সংক্রমণ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

কয়েক মাস আগে যখন বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি প্রথমে সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতেই দেখা গিয়েছিল।

সারাদেশে রোগী শনাক্তের হার সাড়ে চার শতাংশের কাছাকাছি হলেও কয়েকটি জেলায় সংক্রমণের হার আরো বেশি, এর একটি রাজশাহী বিভাগের জেলা নাটোর। নাটোরে এখন রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশ।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সেখানে গত এক সপ্তাহ করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন আসছে টেস্টের জন্য, তারপর শনাক্ত হচ্ছে দুই জন, পাঁচজন এরকম। একদিন ১১ জন সর্বোচ্চ ছিল। এর মধ্যে (এক সপ্তাহের মধ্যে)। এখন যাদের পাওয়া যাচ্ছে এখানে তাদের কোনো বিশেষ উপসর্গ নেই। শারীরিক সমস্যার মধ্যে মাথাব্যথা, কাশি আছে।

উত্তরাঞ্চলীয় নাটোর জেলার সাথে ভারতের সরাসরি সীমান্ত নেই, কিন্তু অপর দুই সীমান্ত সংলগ্ন জেলা রাজশাহী এবং কুষ্টিয়ার মাঝখানে এই জেলার অবস্থান।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন করে সেখানে কোভিড-১৯ রোগীদের একটি অংশ ভারত থেকে আসা আত্মীয়স্বজনের সংস্পর্শে এসেছেন।

ভারতে সপ্তাহ খানেক হলো করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।

দিল্লি-মহারাষ্ট্র-পশ্চিমবঙ্গসহ যেসব রাজ্যে সংক্রমণ বেশি সেখানে কারফিউ জারি, নানারকম বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ভারতের সাথে এখনো বাংলাদেশের নৌ, আকাশ এবং স্থলপথে যাত্রী আসা-যাওয়া চলছে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে মানুষ যাতায়াত করেন, যেমন বেনাপোল এবং বুড়িমারী, সেই সাথে যেসব বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী পরিবহন যাতায়াত করে যেমন-চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর রয়েছে।

সেখানকার স্থানীয় মানুষ বলছেন, সংক্রমণ একটু একটু করে বাড়ছে, কিন্তু স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা তেমন নেই।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর সংলগ্ন উপজেলা শিবগঞ্জের একজন জনপ্রতিনিধি শিউলি বেগম বলেন, কিছুই মানে না তো লোকে। যখন (সংক্রমণ) বেশি ছিল তখন তাও মানত এখন কোনো কিছুর বালাই নাই। আবার যখন প্রশাসন বা উপজেলা পরিষদ মাইকিং শুরু করবে, তখন সতর্ক হবে, তার আগে না। কিন্তু এখনো উপজেলা পরিষদ তেমন উদ্যোগ শুরু করেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।

বেনাপোলের ইমিগ্রেশন পুলিশ বলছে, ইতোমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার যাত্রী সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে।

সেই সাথে বেনাপোলে এখন আরটিপিসিআরের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে রোগী সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ অমিক্রন আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষার প্রক্রিয়া বেশ শ্লথ।

সূত্র : বিবিসি