সারা দেশে সংগঠন গোছাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি

সারা দেশে সংগঠন গোছাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে দুই দফায় সদস্য বেড়ে এখন ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে আটজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, পাঁচজনকে সহমুখপাত্র, চারজনকে যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং ১৪ জনকে সংগঠক করা হয়। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক মনোনীত করা হয়েছে। সারা দেশকে ২০টি জোনে (এলাকা) ভাগ করে সংগঠকদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে নাগরিক কমিটি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য পদে ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ও বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতারাও রয়েছেন।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বয়কেরা। প্রথমে ৬৫ জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক-সহসমন্বয়কের একটি টিম ছিল। পরে ১৫৮ জনের টিম করা হয়। গত ২২ অক্টোবর সেই টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ২১ নভেম্বর ১৮ সদস্যের নির্বাহী কমিটি করা হয়। এখন নির্বাহী কমিটির সদস্য ২২ জন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির যাত্রা শুরু হয়। এই দুই প্ল্যাটফর্মের নেতাদের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে।

জাতীয় নাগরিক কমিটি

গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ‘প্রতিনিধি কমিটি’ গঠনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুরু হয় জাতীয় নাগরিক কমিটির। এখন পর্যন্ত দেশের ৬৭টি থানা ও উপজেলায় তারা প্রতিনিধি কমিটি করেছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ২১টি কমিটি করা হয়েছে। ঢাকার থানা কমিটিগুলোর মধ্যে যাত্রাবাড়ী, হাতিরঝিল, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর, গুলশান ও তুরাগ অন্যতম।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪৬টি কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ, খুলনা সদর, নেত্রকোনা সদর, কক্সবাজার সদর, কুষ্টিয়া সদর, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, কুমিল্লার মুরাদনগর, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, বাগেরহাটের ফকিরহাট ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানা কমিটি অন্যতম। একেক জায়গায় কমিটির আকার একেক রকমের। জেলা কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

প্রতিনিধি কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষক, আইনজীবী, লেখক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী থেকে গৃহিণীরা রয়েছেন এসব কমিটিতে। তরুণ নেতৃত্বের সমন্বয়ে কমিটিগুলো করা হচ্ছে। এই কমিটিগুলো ৬০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তরিত হবে।

চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের সব থানা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা আছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ এগোচ্ছে বলে প্রথম আলোকে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পাশাপাশি গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। সবার মতামত নিয়েই গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজটি চূড়ান্ত করা হবে।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া হলেও জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ চলছে। এই দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে দলটি ভিন্ন নামে করা হবে বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। ওই সূত্রগুলো বলছে, দল ঘোষণার পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বহাল থাকবে। দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য আরও দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। সাংগঠনিক ভিত্তিটা শক্তিশালী করার পর দল ঘোষণার কথা ভাবা হচ্ছে।

গত ২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটানো শুরু করে। এখন পর্যন্ত দেশের ১৭টি জেলা, ৩টি মহানগর, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি করেছে তারা। কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন শুধু শিক্ষার্থীরা। একেক জেলায় কমিটির আকার একেক রকম।

এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটি হয়েছে কুমিল্লা, রংপুর ও বরিশালে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম কমিটি হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কুষ্টিয়ার পর জেলা পর্যায়ে কমিটি হয়েছে নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, কুমিল্লা, রংপুর, যশোর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিলেট ও গাজীপুরে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলায় কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হচ্ছে। দেখা যাক, ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি ঘোষণার কাজ শেষ করা যায় কি না।’

গঠনতন্ত্র প্রণয়ন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তবে এর আগে বিভিন্ন সাংগঠনিক সেল গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে দপ্তর সেল ও মিডিয়া সেল গঠন করা হয়েছে। এ রকম বিভিন্ন সেল গঠনের কাজ শেষ হলে গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here