বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সারাদেশে আরও ৫৩টি মামলা হয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৭টি। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। এতে এজাহারনামীয় আসামি ১ হাজার ৫৪৪ জন। আসামির তালিকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ শীর্ষ নেতাদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা কয়েক হাজার।
‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে তিনি গাড়িতে হামলা চালান। তার কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরার চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা। এদিকে, সংঘর্ষের দুই দিন পরও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ ফিতা দিয়ে একাংশ ঘিরে রাখা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, শনি ও রোববার পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৯০ জন নেতাকর্মীকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল দায়ের হওয়া ৯টি মামলার মধ্যে পল্টন থানায় তিনটি। এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির ৪৪৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি ৩০০ থেকে ৪০০ জন। ডেমরা থানায় মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৭ জন, অজ্ঞাতানামা আসামির কোনো সংখ্যা দেওয়া হয়নি। বিপুল সংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামির কথা বলা হয়েছে। হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে এজাহারভুক্ত আসামি ২৯ জন। অজ্ঞাতনামা ১১শ থেকে ১২শ জন। মিরপুর থানা ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি ১৫০ থেকে ২০০ জন। পল্লবী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভাটারা থানার মামলায় এজাহারনামীয় আসামি চারজন। এতে অজ্ঞাতনামা অনেকেই বলে উল্লেখ করা হয়। বাড্ডা থানার মামলায় এজাহারে ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এর আগে সহিংসতার ঘটনায় গত রোববার ঢাকায় ২৮টি মামলা হয়। মোট ৩৭টি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ১ হাজার ৫৪৪ জন। অজ্ঞাতনামা ১০ হাজারের বেশি।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি সমকালকে বলেন, রোববার ২৫৬ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে বাসে আগুন দেয় যুবদল নেতা
ডিবি জানিয়েছে, বিএনপির মহাসমাবেশের দিন শনিবার মৌচাক ফ্লাইওভারে ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরে যে ব্যক্তি বাসে আগুন দিয়েছেন, তিনি যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম। কাকরাইলেও বাসে আগুন দিয়েছেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গতকাল ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে রবিউলকে শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে সহিংসতার সঙ্গেও জড়িত ছিল যুবদলের এই নেতা। জানা গেছে, রবিউল যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব। ২০১৩-১৪ সালেও বাসে আগুন দেওয়ার একাধিক ঘটনায় রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার পানিঘাটায়। দুই শতাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ডিবিপ্রধান বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে আগুন লাগিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষের সময় যারা পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগিয়েছে, ওই চক্রটি ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ভেস্ট পরা অবস্থায় বাসে আগুন দিতে পারে। এ ঘটনায় বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঢাকার বাইরে আসামি আড়াই হাজারেরও বেশি
গত রোববার রাত ও গতকাল ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৮৮ জন। জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ৪৪টি মামলা হয়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েকটি এলাকা থেকে রোববার রাতে পুলিশ বিএনপির চার নেতাকর্মীকে আটক করেছে। টঙ্গীতে বিআরটিসি বাসে আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ জনের নামে মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপির ৮৫ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় ৮০ থেকে ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। আড়াইহাজারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজাদসহ ৩১ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। সাভারে দুই মামলায় সাবেক এমপিসহ বিএনপির ১৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজবাড়ীতে ১৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মাগুরায় বাস পোড়ানোর মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলা যুবদলের সভাপতি কল্লোলসহ চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজশাহীর বাঘায় দুই মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নওগাঁর রানীনগর এবং আত্রাইয়ে রোবাবর রাতে বিএনপি-জামায়াতের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়া সদরে তিন মামলায় ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফেনীতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৫২ নেতাকর্মীকে রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বিএনপি ও যুবদলের সাত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের ৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গাইবান্ধা জেলায় রোববার রাতে বিএনপি-জামায়াতের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিস্ফোরক ও নাশকতা আইনের চার মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। লালমনিরহাটে বিএনপির ১৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের অভিযানে ৭১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। শেরপুর জেলায় ছয়টি বিস্ফোরক মামলায় ২৮৮ জন ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৮০ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পিরোজপুরের সাত উপজেলা থেকে গত দু’দিনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৬৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিলেটে হরতালে নাশকতার পাঁচ মামলায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জে বিএনপির হরতাল পালনকালে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সদর, ঘিওর ও সিঙ্গাইর থানায় পৃথক চার মামলা হয়েছে। এতে ৩৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নারায়ণগঞ্জের বিএনপির ৩৭২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছয় থানায় ছয়টি মামলায় ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা পাঁচ মামলার বাদী পুলিশ এবং একটি মামলা করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা।