সাংবিধানিকভাবেই যেভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সম্ভব

 

মানবজমিন ডিজিটাল

১৫ জুন ২০২৩

চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচনের স্বার্থে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ন্যায় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, সরকার বলছে সাংবিধানিকভাবে সেটি আর সম্ভব নয়।

জনগণ, সরকার, বিরোধীদল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অর্থাৎ সকল রাজনৈতিক পক্ষই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও কীভাবে এই নির্বাচন সংবিধানের মধ্যেই একটি বিশ্বাসযোগ্য (অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু হিসেবে স্বীকৃত) ও অংশগ্রহণমূলক (অর্থাৎ, বৃহৎ দলগুলো বর্জন করবে না) পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে দৃশ্যত পরস্পরবিরোধী দু’টি অবস্থানের কারণে এক ধরণের রাজনৈতিক সংকট রয়ে গেছে।

বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো চায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে তার পদে না রেখে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতে, এটি হবে অসাংবিধানিক। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, বর্তমান সংকটের যেকোনো সমাধান বর্তমান সংবিধান থেকেই আসতে হবে।

সুইডেন ভিত্তিক নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ঠিক এমনটিই প্রস্তাব করা হয়েছে, “এমন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা, যেটি কিছুটা আনকোরা হলেও সংবিধান-সম্মত। এই ব্যবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির দাবি যেমন পূরণ হবে, তেমনি এক-এগারোর মতো একটি দুর্বৃত্ত সরকার আসার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যেই আশঙ্কা, তাও দূর হবে।”

সংবিধান পঠন

বাংলাদেশের সংবিধানের একটি মৌলিক পঠন শেষে নেত্র নিউজ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছে বলে জানাচ্ছেঃ

. প্রধানমন্ত্রী নয়, রাষ্ট্রপতির নামে নির্বাহী বিভাগ পরিচালিত হয়

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদটি অলঙ্কারমাত্র। তবে রাষ্ট্রপতির নামেই নির্বাহী বিভাগের সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংবিধানের ৫৫.৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “সরকারের সকল নির্বাহী ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির নামে গৃহীত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ করা হইবে।”

অপরদিকে ৫৫.২ অনুচ্ছেদে — যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে — সেখানে বলা হয়েছে: “প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাঁহার কর্তৃত্বে এই সংবিধান-অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে।”

এই দুই অনুচ্ছেদ একত্রে পড়লে বোঝা যায় যে, নির্বাহী বিভাগের বিধিসম্মত প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী; তবে রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের বিধিসম্মত প্রধান।

রাষ্ট্রপতির এই উচ্চতর অবস্থান সম্পর্কে আরেকটি নিশ্চয়তা পাওয়া যায় সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে, যেখানে বলা হয়েছে যে কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ খালি হলে (৫০.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগের কারণে হলেও), সংসদের স্পিকার তার স্থলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন: “রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।”

সংবিধানের তৃতীয় তফশিলও (গোপনতার শপথ বা ঘোষণা) এই ব্যবস্থা সমর্থন করে। এই তফশিল অনুযায়ী, স্পিকার “কখনও আহুত হইলে রাষ্ট্রপতির কর্তব্য” বিশ্বস্ততার সাথে পালন করার শপথ গ্রহণ করেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি অসুস্থতা, অনুপস্থিতি বা অন্য কোনো কারণে তার কর্তব্য পালন করতে না পারেন, সেই বিষয়ে কোনো সাংবিধানিক এন্তেজাম আমরা খুঁজে পাইনি।

অর্থাৎ, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির পদে সবসময়ই কাউকে না কাউকে অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি না রাখার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই।

. নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রী থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই।

সংবিধানের ৫৬.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

৫৫.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একটি মন্ত্রীসভাও থাকবে, যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ৪৮.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন: “রাষ্ট্রপতি তাঁহার […] দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।”

৫৬.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি অবশ্যই একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন, যিনি হবেন সংসদের একজন সদস্য, যার পেছনে সংসদের বেশির ভাগ সদস্যের সমর্থন থাকবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ যদি কোনো কারণে শূন্য হয়ে যায়, সেই পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির উপর কোনো সময়সীমা আরোপ করা হয়নি।

অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি যদি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক মাসও গ্রহণ করেন, সেই বিষয়ে সংবিধানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। হ্যাঁ, কোনো রাষ্ট্রপতি যদি কোনো কারণে দুর্বত্ত (rogue) হয়ে উঠেন এবং সংসদের নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানান, সেক্ষেত্রে সংসদ অবশ্যই তাকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সেটি আলাদা বিষয়।

অন্য কথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের সংবিধান এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন; কিন্তু সবসময়ই একজন প্রধানমন্ত্রী থাকতেই হবে, তা নয়। অপরদিকে, সকল সময়েই এই প্রজাতন্ত্রের একজন রাষ্ট্রপতি থাকতে হবে।

এবং, যেই সকল সময়ে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী-বিহীন থাকতে পারে, তার একটি হলো নির্বাচনকালীন সময়। অর্থাৎ, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া ও নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের মধ্যবর্তী সময়কাল।

সংবিধানের ১২৩.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন সময় হলো সর্বোচ্চ ৯০ দিন। সংবিধানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, পদত্যাগ, অসামর্থ্য বা মৃত্যুসহ কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি হলে, তার স্থলে রাষ্ট্রপতিকে এই ৯০ দিনের মধ্যেই নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে। আমরা এখানে স্পষ্ট করতে চাই যে, পূর্বের বাক্যটি সম্পূর্ণই অনুমানমূলক এবং আমরা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

সংবিধানের ৫৭.৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে: “প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।” অর্থাৎ, নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বপদে বহাল থাকতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এই অনুচ্ছেদে এমন বাধ্যবাধকতাও নেই যে, নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালন করে যেতেই হবে। বিদ্যমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে বা সামর্থ্য হারালে কী হবে, সেই বিষয়েও এই অনুচ্ছেদে কিছু বলা নেই। পাশাপাশি, নির্বাচনের সময়কালে বিদ্যমান প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত তাকেই স্বপদে থেকে যেতে বলার জন্য রাষ্ট্রপতির উপরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

. নির্বাচনকালীন সময়ে বা তার আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও, মন্ত্রীগণ (অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীসহ) দায়িত্ব পালন করতে পারবেন

যদি প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হয়ে যায়, তাহলে নতুন কেউ তার স্থলে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রীসভার সদস্যগণকে (মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী — টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীসহ) দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে — এই মর্মে কিন্তু সংবিধানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংবিধানের ৫৮.৪ অনুচ্ছেদে এটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে: “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।”

প্রধানমন্ত্রী-শূন্য মন্ত্রীসভায় যেসব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে অনির্বাচিত মন্ত্রীরাও থাকতে পারবেন, যাদেরকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন। ৫৬.২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রীসভায় প্রতি ৯ জন নির্বাচিত সদস্যের বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১ জন অনির্বাচিত সদস্য রাখতে পারবেন। অর্থাৎ, ১০ জন সদস্যের মন্ত্রীসভায় একজন অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট সদস্য থাকতে পারবেন।

মন্ত্রীসভায় একজন বা একাধিক টেকনোক্র্যাট সদস্য রাখার বিষয়টি সাংবিধানিক ও বৈধ হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল বড় দলের কাছেই গ্রহণযোগ্য। এমনকি, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসভাতেই একাধিক অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট সদস্য রয়েছেন।

আর প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাচনকালীন সময়ের পূর্বে বা ওই সময়ে পদত্যাগ করেন, তাহলে যতদিন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন মন্ত্রীসভা গঠন না হবে, ততদিন ওই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন।

. একজননির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীবিহীন নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভার সাংবিধানিক সুযোগ

সংবিধানের ৫৫.২ অনুচ্ছেদে যেমনটা আমরা দেখি, প্রধানমন্ত্রী বা তার কর্তৃত্বে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। তার পরামর্শেই রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের দায়িত্বভার বা পদ প্রদানের জন্যও তিনি ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

অর্থাৎ, একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে যদি প্রধানমন্ত্রী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী — অথবা একজন “নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী — হিসেবে নিয়োগ দিতে চান, যার প্রধান দায়িত্ব হবে নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করা, সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বিধিনিষেধ নেই।

এই “নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী” এই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য সকল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন— এর মধ্যে প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকতে পারে।

সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোসহ, সকল বড় দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকল সংসদীয় দলের সদস্যগণকে নিয়ে নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভা গঠন করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপর কোনো বিধিনিষেধ নেই।

৯০ দিনের নির্বাচনকালীন সময়ে বা তার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে স্বপদে বহাল থাকতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করার উপর সাংবিধানিক বাধা নেই। আর প্রধানমন্ত্রীর পদ যদি এই পদত্যাগের কারণে শূন্য হয়, তখন সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের আগ পর্যন্ত নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী ও নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভার সদস্যরা নিজ নিজ পদে থেকে যাবেন।

বিষয়ে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নেত্র নিউজ বলছেঃ

প্রধানমন্ত্রী-বিহীন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার এবং একজন টেকনোক্র্যাট “নির্বাচন মন্ত্রী” নিয়োগ সাংবিধানিকভাবে সম্ভব। তবে একে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, সকল বড় দলের মধ্যে একটি জাতীয় সংলাপ হতে হবে। কিন্তু দুই দলের মধ্যে যেহেতু ভয়াবহ অবিশ্বাস বিদ্যমান, তাই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একটি ঘোষিত আলোচ্যসূচী ও রূপকল্পের ভিত্তিতে এই ধরণের সংলাপ আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সকল বড় রাজনৈতিক দলের (বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে ছয়টি মূল বিষয়ে ঐক্যমত্য প্রয়োজন:

১. বর্তমান সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিতব্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নতুন একজন রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ঐক্যমত্য;

২. নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রীর পদে কে থাকবেন, সেই বিষয়ে ঐক্যমত্য; এই মন্ত্রীকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন;

৩. নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভায় কারা থাকবেন, সেই বিষয়ে ঐক্যমত্য; এই মন্ত্রীসভা কেবল নিত্যনৈমিত্তিক নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে যাবে;

৪. একটি নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে ঐকমত্য, যেটি রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন;

৫. নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সংসদ কখন ভেঙ্গে দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে ঐক্যমত্য;

৬. বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঠিক কোন তারিখে পদত্যাগ করবেন, সেই বিষয়ে ঐকমত্য।

এই মডেল অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অভিভাবকই হবেন না; তিনি হবেন সকল বড় দলের ঐক্যমত্যে গঠিত “নিরাপদ প্রস্থান” বিষয়ক চুক্তির জিম্মাদার; এই সংক্রান্ত আলোচনা হতে পারে জাতীয় সংলাপের আলোচ্যসূচীর সপ্তম দফা।