সভাপতিকে অপসারণ, নির্বাচনে নেই গণফোরাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে গণফোরামে (ড. কামাল হোসেন) তোলপাড় শুরু হয়েছে। দলটির সভাপতিসহ ৫ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে থাকলেও বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে প্রথম দফায় প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এবং দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে। এই দুটি বৈঠকে বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তাদের মতের তোয়াক্কা না করে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামালের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা। এই অভিযোগে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে দল থেকে অপসারণও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। অপসারণের বিষয়টি গতকাল তাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েও দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।   জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং না যাওয়ার বিষয়ে গত ১৮ই নভেম্বর গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন।

এরমধ্যে ৬ জন নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। ২ জন বলেছেন, গেলেও ভালো না গেলেও হয়।

আর সভাপতিসহ বাকি ৩ জন নির্বাচনের যাওয়ার পক্ষে মত দেন। একপর্যায়ে মফিজুল ইসলাম বলেন যে. ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করবেন। এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সবাই একমত হন। ১৯শে নভেম্বর তারা ড. কামালের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যান। কিন্তু নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে ড. কামাল কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।  গণফোরামের আরও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ২৩শে নভেম্বর গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে ৩৯ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে ২৮ জন নেতা তাদের বক্তব্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বলেছেন। ৫ জন বলেছেন, অধিকাংশ যে সিদ্ধান্ত দিবেন তাদের সঙ্গে তারা একমত। আর বাকি ৬ জন নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। পরে এই ৬ জনের মধ্যে ২ জন বলেন যে, সবাই যা বলেছেন তারাও তাই করবেন। সিদ্ধান্ত নিজের দিকে না যাওয়ায় এই বৈঠকেও রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর করেননি মফিজুল ইসলাম খান কামাল। এই বৈঠকের পরও তিনি ড. কামালের কাছে যেতে চান।

পরে সবাই মিলে ড. কামাল হোসেনের কাছে গেলে তিনি বলেন যে, অধিকাংশের যে সিদ্ধান্ত- তাই হবে।  ড. কামাল হোসেনের এই সিদ্ধান্ত না মেনে পরের দিনই মফিজুল ইসলাম খান কামাল ইসিতে গিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর নিজের স্বাক্ষরেই তার এবং অন্যদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। যেখানে গণফোরামের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া এবং প্রতীক বরাদ্দের স্বাক্ষরের ক্ষমতা দলটির সাধারণ সম্পাদকের।  এ বিষয়ে গতকাল গণফোরামের তলবি সভা ডাকা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে দলের সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি চিঠি তাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। মফিজুল ইসলাম খান কামাল টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে গণফোরামের এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল মানবজমিনকে বলেন, সভা কে ডেকেছিল? তারা কি সভা ডাকতে সভাপতির অনুমতি নিয়েছিলেন? আসলে আমি তাদের কথা শুনি নাই বলে তাদের বুকে ব্যথা। আর এটা পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে। এসব ভোগাস। ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাউল রাজনীতি আমি করি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রিন্সিপাল। আমার পরিবারে এসব নেই। আর আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছি। এ বিষয়ে নো কমেন্ট।

গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সমীচিন হবে না। জাতীয় সংলাপের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কথা আমরা বলেছিলাম। এটা করলে আমরা নির্বাচনে যেতাম। কিন্তু মফিজুল ইসলাম খান কামাল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি নিজেই স্বাক্ষর করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যেখানে মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের স্বাক্ষরের অথরিটি দলের সাধারণ সম্পাদকের। এজন্য দলের তলবি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাকে দল থেকে অপসারণ করা হয়। এটা তাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েও দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত গণফোরামের কতোজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন- জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাছে কোনো আবেদন পড়েনি। মনোনয়ন স্বাক্ষরের অফিসিয়ালি কোনো ডকুমেন্টও নেই। গণফোরামের এই অংশের দলের ইমিরেটাস সভাপতি দলটির প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন। সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান। অন্যদিকে মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও এডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের আরেক অংশ নির্বাচন বর্জন করে সরকার পতনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে।

মানব জমিন