শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস: ঝিনাইদহে গুম-খুনে জড়িত ছিলেন যারা (শেষ পর্ব)

 আমার দেশ
২৩ জানুয়ারী ২০২৩

ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে সমাজের সাধারণ মানুষকে  তুলে নিয়ে গুম ও পরবর্তীতে খুন করে

ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে সমাজের সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে গুম ও পরবর্তীতে খুন করে

আহমেদ আফগানী

ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনা ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মী এমবিবিএস ডাক্তার, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, সাধারণ ব্যবসায়ীকে বিচার-বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রথম তুলে নিয়ে গুম করা হয়। পরবর্তীতে খুন করা হয় তাদেরকে।

২০১৬ সালে ঝিনাইদহে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন একে একে ১৪ জন ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মী। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলোর সদস্যরা। প্রথমে তাদের গুম করে রাখা হয়। পরবর্তীতে লাশ পাওয়া যায় এখানে-সেখানে। ঝিনাইদহে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব। আগের দুই পর্বে আমার দেশ ৮ জনকে কিভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এবং প্রথমে গুম ও পরবর্তীতে খুনের সাথে পুলিশের যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের পরিচয় তুলে ধরেছি।

ঝিনাইদহ শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ৯ম শিকার হলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ইসলাম মামুন। তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ঝিনাইদহ শহরের একটি থানার অর্থ সম্পাদক ছিলেন সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের জেলার শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নে।

সাইফুল ইসলামের বাবা লুৎফর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত ১ জুলাই ২০১৬ তারিখ শুক্রবার গভীর রাতে ঝিনাইদহ শহরের পবহাটীর টুলু মিয়ার বাড়ির ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ তার ছেলেকে আটক করেছিল। সাইফুলকে আটকের খবর থানা থেকে এক পুলিশ সদস্যের মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছিল।

খবর পেয়ে সাইফুল ইসলামের বাবা শনিবার দুপুরে তার প্রতিবেশী কাজিপাড়া গ্রামের তপন কুমার ঘোষসহ ঝিনাইদহ সদর থানায় খবর নিতে আসেন। এ সময় দূর সাইফুল ইসলাম থানা হাজতে দেখতে পেয়েছেন তিনি। দূর থেকে তাদের ইশারা বিনিময় হয়েছিল। বিকাল ৩টার দিকে খাবার দিতে গেলে থানা থেকে জানানো হয় সাইফুল নামে থানায় কেউ নেই। এবার পুলিশ সাইফুলের গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে। সাইফুলের বাবাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অবস্থা বেগতিক দেখে সাইফুলের পরিবারের সদস্যরা নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে যান। এই বিষয়ে সাইফুলের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন জানান, সাইফুলকে পুলিশ গ্রেফতার ও গুম করে ফেলার পর আমরা ফুলহরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বিপুল ও শৈলকূপার এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাইকে জানাই। তারা বলেছিলেন শিবির করলে আমরা কিছুই করতে পারব না।

১৮ দিন গুম রেখে ভীষণ অত্যাচার করা হয়েছিল সাইফুল ইসলামকে। ১৯ জুলাই ২০১৬ তারিখ গভীর রাতে পুলিশ গুলি করে খুন করে সাইফুল ইসলামকে।

ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার তখন গণমাধ্যমের কাছে একটি বয়ান উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর বয়ান অনুযায়ী ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের একটি টহলদল ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কে আড়ুয়াকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ৪/৫টি হাতবোমা ছুড়ে মারে। পুলিশের আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে কমপক্ষে ২০ মিনিট গুলিবিনিময় হয়। বন্দুকযুদ্ধ শেষে শিবির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ সাইফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর এরকম বয়ান তৈরি করে প্রতিটি ঘটনায়।

অথচ বাস্তবতা হলো ১ জুলাই থেকে সাইফুল ইসলাম পুলিশের কাছে বন্দি ছিলেন। সাইফুল ইসলামের সাথে আরো দুইজন শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাইফুলসহ গুম থাকা সবার জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিবারগুলো। পুলিশ গ্রেফতার করাকে স্বীকার করেনি, জিডিও গ্রহণ করেনি। সাইফুলের সাথে থাকা দুইজন পুলিশের শিখিয়ে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুরোহিত হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হলে সাইফুলকে খুন করার দুইদিন আগে অর্থাৎ ১৭ জুলাই ২০১৬ তারিখে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

পুলিশের কথা সত্য হলে সাইফুলের শরীরে শুধু গুলির দাগ থাকতো। কিন্তু সাইফুলের লাশের পুরো শরীর জুড়ে ছিল গভীর আঘাতের চিহ্ন। তার দুইহাত ও দুই পা ভীষণ ফোলা ও আঘাতের ফলে কালো হয়ে গিয়েছিল। একই রকম আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল স্বীকারোক্তি দেওয়া দু’জনের শরীরেও।

২৬ জুলাই ২০১৬ তারিখে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রমজান আলী নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশের দাবি অনুসারে ৩০ জুলাই ২০১৬ তারিখে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাটাখালী নামক স্থানে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রমজান আলী (৪৬) নামে একজন ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কুড়োন মণ্ডলের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ গণহত্যার ১০ম শিকার। একজন নিরীহ মানুষকে হত্যার পর ডাকাত বানিয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজও করেছে ঝিনাইদহ পুলিশ।

একই রকম বর্ণনা দেওয়া হয় এই হত্যাকাণ্ডের পর। মহেশপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম তাঁর বয়ানে বলেছিলেন, পুলিশের একটি টহল গাড়ি মহেশপুর কোটচাঁদপুর সড়কের কাটাখালী নামক স্থানে পৌঁছালে ওঁৎ পেতে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারে। এ সময় পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। দশ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত এক ডাকাত সদস্যের লাশ উদ্ধার করে। কৃষ্ণপুর গ্রামের ইউপি সদস্য ওমর আলী ও একই গ্রামের বাসিন্দা কোমল কুমার মৃতদেহটি রমজান আলীর বলে শনাক্ত করে। অথচ রমজান আলী গ্রামের বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী এবং তাঁকে ৪ দিন আগেই এরেস্ট করা হয়েছিল। রমজান আলী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না।

২০১৬ সালের ২ আগস্ট যশোরের ষষ্ঠীতলা গ্রামের শরিফুল ইসলামের ট্রেনে কাটা পড়া লাশ পাওয়া যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফুলবাড়ী রেলগেটে। শরিফুল ইসলামের পরিবার দাবি করে ২৭ জুলাই তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রেফতার করে একদল লোক। শরিফুল কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। তিনি ঝিনাইদহ গণহত্যার ১১তম শিকার

২০১৬ সালের ৪ আগস্ট গ্রেফতার হন রঘুনাথপুর হোসেন আলী আলিম মাদরাসার শিক্ষক ও মহিষগাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইদ্রিস আলী ওরফে পান্না হুজুর। পান্না হুজুর রঘুনাথপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। তাকে রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। এরপর অনেক স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায় নি।

৯ আগস্ট মাওলানা ইদ্রিস আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকসহ দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন, তার স্বামীকে ৪ আগস্ট (২০১৬) শৈলকূপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে ফেরার সময় রাত ৮টার দিকে সাদা পোশাকধারী লোকজন মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যায়। এরপর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ নেয়া হয়নি।

৮ দিন গুম করে রাখার পর ১২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে হরিণাকুন্ডু-ঝিনাইদহ সড়ক থেকে লাশ উদ্ধার করার নাটক সাজিয়েছিল পুলিশ। পান্না হুজুরের লাশ পাওয়া যায় অত্যন্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায়। তার হাত-পায়ের নখ ওঠানো। গায়ে প্রচুর ক্ষতস্থান। ধারণা করা হয় পুলিশের ভীষণ নির্যাতনে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিল। পুলিশ তার লাশের উপর গাড়ি চালিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বলে নাটক সাজায়। মাওলানা ইদ্রিস আলী ওরফে পান্না হুজুর ঝিনাইদহ গণহত্যার ১২তম শিকার।

ঝিনাইদহ গণহত্যার ১৩তম শিকার হলেন ঝিনাইদহ পৌরসভা জামায়াতের আমীর জহুরুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ শহরের দিশারি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সদর থানা পুলিশের এসআই আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়েছিল। তারপর ওই স্থানে থাকা সি.সি ক্যামেরা ও তার রেকর্ড খুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে অজানা স্থানে নিয়ে যায় এস আই আমিনুল। তার খোঁজে থানায় যোগাযোগ করে আত্মীয়রা। থানা পুলিশ দিনে দুপুরে শত মানুষের সামনে ঘটা এই গ্রেফতারের ঘটনা অস্বীকার করে।

নিহত জহুরুল ইসলাম কালিগঞ্জ আসাদুজ্জামান হোসনেয়ারা কেয়া বাগান কলেজের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। এ ছাড়া ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেছেন। তিনি একাধিকবার ঝিনাইদহ জেলা ও পৌর ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি বিয়ে করেন। জহুরুল ইসলামের খোঁজে পরিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে, জামায়াত বিবৃতি দেয় ও বিক্ষোভ মিছিল করে। কিন্তু কোথাও জহুরুল ইসলামের খোঁজ মিলে না।

এদিকে এই ঘটনার ৬ দিন পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ শহরে বাড়ির পাশ থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় ডা. তারিক হাসান সজিবকে। ডা. সজিব ঝিনাইদহ গণহত্যার ১৪তম শিকার। তারিক হাসান সজিবের গ্রামের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে। তিনি আরাপপুর সেবা ক্লিনিকের পাশে বসবাস করতেন। পেশায় একজন ডাক্তার। বেশ কিছুদিন ঝিনাইদহ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে যান। দুই বছর আগে একই এলাকার লুৎফর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করেন। গ্রেফতারের সময় তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা ছিলেন।

ডা. তারিক হাসান সজিব ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তরের অফিস সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী পশ্চিমে স্কুল কার্যক্রম সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিহত ডা. সজিব ঝিনাইদহ ব্যাপারিপাড়ার মৃত খন্দকার আব্দুল লতিফের ছেলে।

সজিবের মা মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে এমবিবিএস ডাক্তার। ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদের পরের দিন বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের বাড়ির পাশে হাটের রাস্তা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। এ ব্যাপারে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ঝিনাইদহ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।’

দীর্ঘদিন পাওয়া যায়নি জহুরুল ইসলাম ও ডা. তারিক হাসান সজিবকে। ২৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করে পুলিশ। জনপ্রিয় জামায়াত নেতা জহুরুল ইসলামকে ৪৮ দিন গুম করে রেখে নির্মম নির্যাতনের পর ঠাণ্ডা মাথায় গুলী করে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। একইসাথে মেধাবী ছাত্রনেতা ডা. তারিক হাসান সজিবকে ৪২ দিন গুম রেখে নির্যাতন করে খুন করে পুলিশ।

এই দুই খুনের ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শহরের নাজির উদ্দিন সড়কে পুলিশের একটি দল ডিউটিতে ছিল। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় যুবক যাচ্ছিল। পুলিশ থামার সংকেত দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী ও ককটেল ছুড়ে। আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলী ছুড়ে। একপর্যায়ে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যায়। তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন-ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড আবাসিক ভবনের সমশের আলী মোল্লার ছেলে ও পৌর জামায়াতের আমীর জহুরুল ইসলাম ও আরাপপুর গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে ও ঢাকা মহানগর পশ্চিমের ছাত্রশিবিরের সাবেক দায়িত্বশীল তারিক হাসান সজিব।

অথচ মূল ঘটনা হলো এই দুইজন দেড় মাস ধরে পুলিশের কাছে আটক। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ডা. সজিবের যমজ দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম নিয়েছে। যাদের মুখ তিনি মারা যাওয়ার আগে আর দেখতে পারলেন না। এই দুজনের মৃত্যুতে ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় শোক ও আতংক নেমে আসে। লাশের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসী আওয়ামী সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে অভিশাপ দিতে থাকে।

এই ছয়জন নিরীহ মানুষকে বিনা বিচারে ও নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তাদের পরিবার ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত সন্দেহাতীতভাবে পুলিশকে দায়ী করেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে ৬টি খুনের জন্যই এএসপি আজবাহার আলী শেখ ও ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ হাসেম খান দায়ী।

এর বাইরে সাইফুল ইসলামকে হত্যার জন্য হরেন্দ্রনাথ সরকার (ওসি, সদর, ঝিনাইদহ), ফয়সাল হোসেন (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ) ও সুমন হোসেন (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ) দায়ী। রমজান আলীকে হত্যার জন্য আমিনুল ইসলাম (ওসি, মহেশপুর, ঝিনাইদহ), সেলিম রেজা (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ) ও আহসান হাবিব (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ)। শরিফুল ইসলামের খুনের জন্য দায়ী আনোয়ার হোসেন (ওসি, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ) এবং নীরব হোসেন (এসআই, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ)।

মাওলানা ইদ্রিস আলী হত্যার জন্য মাহাতাব উদ্দীন (ওসি, হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ) দায়ী। জামায়াত নেতা জহুরুল ইসলাম ও ডা. তারিক হাসান সজিবের খুনের জন্য হরেন্দ্রনাথ সরকার (ওসি, সদর, ঝিনাইদহ), আমিনুল ইসলাম (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ), বুলবুল আহমেদ (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ), আলমগীর হোসেন (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ), আজিম উদ্দিন (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ) ও নাসিম হোসেন (কনস্টেবল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ)।