শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৫দিন: ক্যাসিনো জুয়ার বিস্তার ঘটে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে

 আমার দেশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৫দিন

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৫দিন

নিজস্ব প্রতিনিধি

শেখ হাসিনার দুঃশাসনে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে ‘ক্যাসিনো’ জুয়ার রমরমা আড্ডাখানা খুলে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠী। এর আগে বাংলাদেশে কখনো এমন ক্যাসিনো জুয়ার আড্ডার কথা কখনো শোনা যায়নি। এই ক্যাসিনো জুয়ার মাধ্যমে একদিকে হাজারো কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে আওয়ামী গুণ্ডা-পাণ্ডারা। অপরদিকে দেশের যুব সমাজকে ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসের দিকে।

শেখ হাসিনার অনুগত দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী সহ যুবলীগের শীর্ষ নেতারা এই জুয়া পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন।

তারা ক্যাসিনোর জুয়া চালাতে রাজধানীতে জমজমাট ১২টি ক্লাব চালু করেন। এসব জুয়ার আসর থেকে যুবলীগের নামে দৈনিক ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ চাঁদা তোলা হতো। প্রতিটি ক্লাব থেকে দৈনিক চাঁদা নির্ধারণ করা ছিলো ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে দৈনিক চাঁদার পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, মাসে চাঁদা উঠতো ৩৬ কোটি টাকা। বছরে এই টাকার পরিমাণ ৪৩২ কোটি। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারার জেরে আওয়ামী লীগের ভেতরেই ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া দলটির এমপি-শীর্ষ নেতাদের সন্তানেরাও জুয়ায় জড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে শেখ হাসিনার।

২০১৯ সালে র ১৮ই সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করার পাঁচ দিনের মাথায় এমপি শাওন ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে অভিযান শুরু হওয়ার কয়দিন পর চট্টগ্রামে অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হুইপ শামসুল।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ কমান্ডের প্রত্যক্ষ মদদে এই ব্যবসা পরিচালিত হতো। এতে যুক্ত ছিলেন যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ও এনামুল হক ওরফে আরমান, যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ ও হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপণ ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা সভাপতি শফিকুল ইসলাম ওরফে ফিরোজ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান অন্যতম।

এঁদের মধ্যে জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান, শফিকুল ইসলাম, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও সেলিম প্রধান র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন আগে সম্রাটকে জামিনে মুক্ত করে আনে যুবলীগ।

ক্যাসিনো জুয়া থেকে অর্জিত শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের এসব নেতা বিদেশে পাচার করেন। দেশে-বিদেশে গড়েন টাকার পাহাড়। ২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো খোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসার প্রচলন করে যুবলীগ।

চার বছর আগে ক্যাসিনো-কাণ্ডের ঘটনায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ গ্রেপ্তার ১৩ জনের বিরুদ্ধে মোট ৫৭টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে একটি করে দুটি ও জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক ওরফে এনু, রুপন ভূঁইয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা তিন মামলাসহ মোট পাঁচ মামলার তদন্ত চার বছরেও শেষ করেনি আওয়ামী পুলিশ।