ঢাকা
বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার পর ঢাকার কর্মসূচিগুলোতে লাঠি-রড হাতে হাজির হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার মিরপুর-৬ নম্বর এলাকায় সমাবেশে সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর হাতে রড-লাঠি দেখা গেছে।
এদিকে ওই সমাবেশেই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতা-কর্মীদের নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য আরও মোটা মোটা লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে বলেছেন। একই কথা বলেছেন বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘আমরাও প্রত্যেক সমাবেশে লাঠি এবং রড নিয়ে অবস্থান করব। যেখানে বাধা আসবে, সেখানেই জবাব দেওয়া হবে।’
গত শনিবার ঢাকার বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে হামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে দলের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ওই কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি।
এর এক দিন পরে গত সোমবার মহাখালীতে আয়োজিত সমাবেশের দিন থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে বাঁশ ও লাঠি দেখা গেছে। পরদিন গত মঙ্গলবার খিলগাঁওয়ে জোড়পুকুর খেলার মাঠের সমাবেশেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা হাতে লাঠি ও রড নিয়ে অংশ নেন।
লোডশেডিং, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নুরে আলম, আবদুর রহিম, শাওনের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে ঢাকা মহানগর উত্তর (মিরপুর জোন) বিএনপি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। চলতি মাসের ১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির।
আজ বেলা দেড়টার দিকে মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৫ নম্বর লেনে গিয়ে দেখা যায় দুটি ট্রাক একসঙ্গে করে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। পাশেই বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী বাঁশের লাঠি একত্রে আঁটি করে বেঁধে সমাবেশ স্থলে নিয়ে আসছিলেন। এভাবে কয়েক আঁটি বাঁশের লাঠি এনে রাখতে দেখা যায়। এসব বাঁশের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বাঁধা ছিল।
এর কিছুক্ষণ পরেই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলের সঙ্গে আসা বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর হাতেও পতাকা টানানো লাঠি ও রড দেখা গেছে। এ ছাড়া কারও হাতে ছিল বাঁশ কিংবা কাঠের তক্তার লাঠি, কেউ নিয়ে এসেছেন স্টিল কিংবা প্লাস্টিকের পাইপ।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে মিরপুর থানা বিএনপির এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো রাস্তা অবরোধ কিংবা গাড়ি ভাঙচুর করছি না। আত্মরক্ষা করতেই লাঠি নিয়ে সমাবেশে এসেছি।’
আড়াইটার দিকে সমাবেশ শুরু হলে একপর্যায়ে পুলিশ প্রশাসন বিএনপি নেতা-কর্মীদের লাঠি ও রড সরাতে বলেন। কিছু পুলিশ সদস্যকে সমাবেশে আসা লোকজনের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে নিতেও দেখা যায়। তবে বিএনপি নেতারা পুলিশকে লাঠি-রড দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে পতাকা বাঁধা লাঠি ও রডগুলো হাতে ধরে না রেখে নামিয়ে রাখতে বলা হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তাঁর বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে কি কিছু হবে? আজকে আপনারা পতাকা বাঁধা ছোট ছোট লাঠি নিয়ে এসেছেন। পুলিশ সেই লাঠি নিয়ে নিতে চেয়েছিল। আপনারা দেন নাই। এর পরে মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
এই নেতা আরও বলেন, নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের হাতে লাঠি রাখতে হবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। তবে আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করতেই হবে। সেখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আন্দোলন করছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যদি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ছেলেরা রাস্তায় রড-লাঠি নিয়ে অবস্থান করতে পারে, তাহলে আমরাও প্রত্যেক সমাবেশে লাঠি এবং রড নিয়ে অবস্থান করব। যেখানে বাধা আসবে সেখানেই জবাব দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাদের পছন্দ করা জায়গাতেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তারা কোনো লাঠিসোঁটা সঙ্গে নিয়ে সমাবেশে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু তারা সেই শর্ত মানেনি।
আজকের সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ। সমাবেশে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।