রাশিয়ান দূতাবাসের বিবৃতির প্রেক্ষিতে টিআইবির প্রতিউত্তর


রাশিয়া-বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধান ও গম ক্রয় চুক্তির বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) বিবৃতির ব্যাপারে বাংলাদেশে রাশিয়ান দূতাবাসের প্রতিবাদের প্রতিউত্তর দিয়েছে সংস্থাটি।

পশ্চিমা শক্তির সাথে রাশিয়ান বৈরিতার ব্যাপারে টিআইবির উদ্বেগকে যুক্ত করার রাশিয়ান দূতাবাসের প্রচেষ্টা পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং আত্মঘাতী উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের গম আমদানি বা গ্যাস অনুসন্ধানসহ কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি বা পণ্য সরবরাহকারী কোনো দেশ সম্পর্কে টিআইবির কোনো আপত্তি নেই। টিআইবির জন্য একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- যথাযথ প্রক্রিয়া, দেশের অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার বা ভ্যালু ফর মানি এবং সর্বোপরি এই ধরনের চুক্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, “টিআই-রাশিয়াকে ‘বিদেশি এজেন্ট’ আখ্যা দিয়ে নিপীড়ন করা রাশিয়ান সরকারের এমন এক কর্মকাণ্ড, যা তাদের গর্ব করার মতো কাজের তালিকায় একেবারে তলানিতে থাকবে, রাশিয়ান দূতাবাস এই বিষয়টি বুঝতে না পারার ঘটনায় টিআইবি হতাশ হলেও, অবাক হয়নি। রাশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য কাজের জন্যই যে টিআই রাশিয়াকে ক্লেপ্টোক্রেটিক রাশিয়ান সরকারের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে, তা সর্বজনবিদিত। তাছাড়া, টিআই-ই একমাত্র এনজিও বা সিএসও নয়, যা রাশিয়ান শাসনব্যবস্থার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং নিপীড়িত হতে হয়েছে।”

টিআইবি বলছে, উল্লিখিত দুটি চুক্তির বিষয়ে টিআইবির উদ্বেগের পেছনের যুক্তি পরপর দুটি বিবৃতিতে পর্যাপ্তভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমের সূত্রে ব্যাপকভাবে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তা টিআইবির ওয়েবসাইটেও উন্মুক্ত রয়েছে। বলাবাহুল্য, রাশিয়ান দূতাবাসের বিবৃতি চুক্তি দুটিকে ঘিরে আরো বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ন্যাশনাল ইলেকট্রিক এলএলসি রাশিয়ান রফতানিকারকের এজেন্ট হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল না বলে, দূতাবাসের দাবি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ওই সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে তথাকথিত স্থানীয় এজেন্ট চূড়ান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেন। টনপ্রতি ১০০ মার্কিন ডলারের ল্যান্ডিং খরচ এবং এই উচ্চ হারে ৫ লাখ টন পণ্যের চুক্তিতে কিভাবে ভ্যালু ফর মানি নিশ্চিত করা হয়েছে- এই বিষয়ে রাশিয়ান দূতাবাসের বিবৃতিতে কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। অধিকন্তু, ‘জি-টু-জি ভিত্তিতে গম আমদানির খরচ উন্মুক্ত টেন্ডারিং পদ্ধতির চেয়ে কম’ এই দাবিটিও গ্রহণযোগ্য নয় কারণ, জি-টু-জি পদ্ধতির ক্ষেত্রে ও নির্ধারিত দর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না, তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই দর বিশ্ববাজারে তূলনামূলক কম ছিল এবং আরো কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

টিআইবির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানির সাথে তুলনা করার প্রচেষ্টাও প্রাসঙ্গিক নয়। গ্যাজপ্রমকে চুক্তি প্রদানের ব্যয়ের তুলনায় বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমিত ব্যয় বিবেচনা করে টিআইবি তার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এই চুক্তির অধীনে গ্যাজপ্রমের ব্যয় বাপেক্সের চেয়ে তিন গুণ বেশি ছিল কেন- তা রাশিয়ান দূতাবাস ব্যাখ্যা করলে দূতাবাসের প্রয়াস অর্থবহ হতো। 

উল্লেখ্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল রাজনৈতিক উদ্দেশে গঠিত হয়েছে মন্তব্য করে ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি ভিত্তিহীন প্রতিবেদন তৈরির জন্য পরিচিত। রাশিয়াতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে ‘বিদেশী এজেন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুধবার রাশিয়ার দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি বলেছে, রাশিয়া থেকে অতিরিক্ত দামে বাংলাদেশ সরকার গম আমদানি করছে। এ ছাড়া রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে উচ্চ দরে গ্যাস কূপ খনন করতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো জনস্বার্থবিরোধী।

এর প্রতিক্রিয়ায় দেয়া বিবৃতিতে রাশিয়ান দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশ-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কসহ রাশিয়ান ফেডারেশনের বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে ভ্রান্ত তথ্য এড়াতে দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত দিতে প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও যৌথ প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে রাশিয়া সাধুবাদ জানায়। টিআইবি তার তদন্তের জন্য রাশিয়ান দূতাবাস, গ্যাজপ্রম এবং জেএসসির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা চায়নি।

টিআইবির অভিযোগ, রাশিয়া থেকে পাঁচ লাখ টন গম কিনতে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করেছে, যার দর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি। এ ব্যাপারে রাশিয়ান দূতাবাস বলেছে, গত ২৪ আগস্ট প্রতি টন ৪৩০ ডলার দরে গম কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চুক্তি সইয়ের সময়ে এই দর আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এই দরে অন্য কোনো সরবরাহকারী গম দিতে পারেনি। এ ছাড়া খোলা দরপত্রের চেয়ে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে গম আমদানি অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী।