রাজশাহী সিটি মেয়র ও ছাত্রলীগের বক্তব্য চরম উস্কানিমূলক : ছাত্রশিবির


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে কেন্দ্র করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের উস্কানিমূলক ও ‘আক্রমণাত্মক সন্ত্রাসী’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে তাদের এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি রাগীব শাহরিয়ার ও সেক্রেটারি তাসনীম আলম।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তার এই বক্তব্য ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তিনি তার আজন্ম সন্ত্রাসী চরিত্র ও বিকৃত রূপ জাতির সামনে প্রকাশ করেছেন। তিনি নির্লজ্জের মতো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

তারা আরো বলেন, মেযর লিটনের সাথে সুর মিলিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন, ‘যেখানেই জামায়াত-শিবির সেখানেই গণধোলাই’। একইসাথে চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরকে রুখে দিতে সকল ধরনের সহযোগিতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ করবে’ – এসব বক্তব্য কোনো জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা ছাত্রসংগঠনের নেতার হতে পারে না বরং তা সন্ত্রাসী-বর্বরদের বক্তব্য। আদর্শহীন সন্ত্রাসনির্ভর আওয়ামী রাজনীতির ভয়াল চিত্রটি তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসী আবারো দেখতে পেয়েছে।

‘রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক খায়রুজ্জামান লিটন, তা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। খায়রুজ্জামানের মত আওয়ামী লীগ নেতাদের সরাসরি মদদে তাদের লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নৃশংস বর্বরতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আবরার ফাহাদ, আবু বকর, শরীফুজ্জামান নোমানীসহ বহু মেধাবী ছাত্র নিহত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ যেমন দেশে গণধিকৃত হয়েছে তেমনি
ছাত্রলীগ সর্বগ্রাসী বর্বরতা ও নৃশংসতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।’ বলেন তারা।

শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে হত্যার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সকল ধরনের সন্ত্রাস মোকাবেলা করেই ইসলামী ছাত্রশিবির আজ গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ছাত্রশিবিরের পথচলার শুরুতে এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই চারজন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করে আমাদের পথচলা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা।

তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করেছেন। রাজশাহীর মাটি বার বার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত করেছেন। একইভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সর্বগ্রাসী জুলুম, নির্যাতন, অবিচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দমন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রশিবিরের পথচলায় সামান্যতম বিঘ্ন ঘটাতে সক্ষম হননি। আপনাদের বক্তব্যেই প্রমাণ হয়েছে এতকিছুর পরও রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আপনারা ভীত-সন্ত্রস্ত। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মেয়র খারুজ্জামান লিটন বা তার হাতিয়ার সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হুমকিকে ছাত্রশিবির পরোয়া করে না।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শক্তিকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বাহাদুরি সুস্পষ্ট কাপুরুষতা। পুলিশের বেষ্টনি থেকে বের হয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করুন। তখন দেখবেন জামায়াত-শিবিরের মাথা কাটা দূরে থাক গণধিক্কারের সামনে নিজেদের মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারবেন না। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্মূল করার দিবাস্বপ্ন আপনাদের কোনদিনই পূরণ হবে না, ইনশাআল্লাহ।’

মেয়র লিটনকে উদ্দেশ্য করে শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির আপনার বা ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসনির্ভর সংগঠন নয়। শিবির ছাত্রজনতার সংগঠন। যার সাক্ষী এদেশের জনগণ। ছাত্রশিবির অতীতেও আপনাদের মত উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করে এ পর্যন্ত এসেছে এবং ভবিষ্যতেও একইভাবে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, খায়রুজ্জামান লিটন প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়ার অপরাধে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে তাদের এ দায়িত্বহীন বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচারবোধ থাকলে তারা তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করবেন বলে আশা করছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি