ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একদফার চলমান আন্দোলন আরও চাঙ্গা ও গতিশীল করতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছেন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেপ্তার এবং বাকিরা আত্মগোপনে থাকায় আগামীতে রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়নে একে অন্যকে সব ধরনের সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোট এখন থেকে একই দিনে একই সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান নিয়ে যার যার ব্যানারে কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পর নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দলের নেতারা।
জোট নেতারা বলছেন, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আরেক দফা ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধীদের আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের পথ অবলম্বন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদেরও কৌশল পরিবর্তন করতে হয়েছে। জোটগুলো এখন একই সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে রাজপথে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারি দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কর্মসূচিতে কোনো হামলা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে সবাই মিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত হয়েছে। আর সুষ্ঠুভাবে আন্দোলন পরিচালনার লক্ষ্যে শিগগির যুগপতে থাকা বিভিন্ন জোটের সমন্বয়কদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। নতুন এই কৌশল নিয়ে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই মাঠে নামবেন যুগপতের শরিকরা।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু যুগপতের জোটগুলোর নতুন এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘একদফা দাবিতে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা যখন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নেমেছে, তখন সেই আন্দোলন দমাতে সরকার হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার ও অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলমান আন্দোলন আরও চাঙ্গা ও গতিশীল করতে শরিক জোটগুলোর সমন্বয়ে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
শেখ বাবলু আরও বলেন, ‘বিএনপিই যুগপৎ আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামীতে রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে নতুন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এই উদ্যোগের ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে এবং শিগগির তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে।’
জানা যায়, যুগপতের শরিকরা এত দিন ঢাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময় ও স্থানে কর্মসূচি করে এসেছেন। তবে মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মসূচি পালনে এখন ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী লাগাতার আন্দোলন ঘিরে আগামীতে গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে তাদের অনেকের। তা ছাড়া জোটভুক্ত অনেক দলই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয়। তাই হামলা ও গ্রেপ্তার এড়ানো এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে জোটগুলো নিজ নিজ ব্যানারে কাছাকাছি অবস্থান করে কর্মসূচি পালনের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র : কালবেলা