পরপর দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবার জাতীয় সংসদে নেই। দলীয় কোন্দলের জেরে এবার এমপি প্রার্থী হতে পারেননি তিনি। তবে নির্বাচনের আগে-পরে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। বিগত নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনা করলেও রওশন এরশাদ এ নিয়ে চুপচাপ। বরং নির্বাচনের পক্ষে সময়ে সময়ে কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় এবারও তাকে সম্মানিত করা হতে পারে। রওশন এরশাদকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হচ্ছে- এমন গুঞ্জনও আছে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকেও এ ধরনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
গত ৯ই মার্চ জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অনুসারীদের ডাকা জাতীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচএম এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ। এ ছাড়া মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। বিরোধী দলের নেতা থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি তার আস্থার কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যক্ত করেছেন। এসবের পুরস্কার হিসেবে দপ্তরবিহীন মন্ত্রীর পদ পেতে পারেন রওশন এরশাদ। মূলত তাকে সম্মান জানিয়েই তার হাতে প্রধানমন্ত্রী পতাকা তুলে দিতে চান বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (রওশন) নেতারা।
এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ মানবজমিনকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার জনগণের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। আমাদের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ উন্নয়নমূলক কাজে সবসময় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তাই ম্যাডামকে সম্মান জানালে সরকার নিজেকেই সম্মানিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন সরকারের দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হচ্ছেন এমন একজন মন্ত্রী যিনি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। অর্থাৎ এদের কোনো দপ্তর থাকে না। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে থাকেন। কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না দিয়েও প্রধানমন্ত্রী কোনো কোনো সময় এ ধরনের মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের বিশেষ ধরনের দাAdd New Postয়িত্ব দেয়া হয়। দপ্তরবিহীন মন্ত্রী অন্যান্য ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের সমান আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা, মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পেয়ে থাকেন যেমন তারা গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগাতে পারেন। তবে তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর মর্জির ওপর। সর্বশেষ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৯ই জুলাই তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেন। এর আগে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রেল মন্ত্রণালয়ের ৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের কেলেঙ্কারির ঘটনা মিডিয়ার সামনে আসলে তাকে ২০১১ সালের ২৮শে নভেম্বর দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিপরিষদে রাখা হয়। এদিকে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের গত ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে না পারায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন তার পত্নী রওশন এরশাদ। এরপর এরশাদকে বিশেষ দূত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
manabzamin