মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ধাপে ধাপে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। নিকট ভবিষ্যতে সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল।
সেই সঙ্গে পাওয়েল আবার এ-ও জানিয়েছেন, উচ্চ সুদের জমানায় মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে তিনি অবগত। এতে আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি কমবে, মানুষের উপার্জন হ্রাস পাবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে গেলে এ ছাড়া উপায় নেই। তাঁর এই হুঁশিয়ারির পরই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এমনিতেই মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জেরবার। তার ওপরে নীতি সুদহার আবার বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতির হাল আরও সঙিন হবে। তবে অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখান থেকে বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশে যেতে পারে, যার বদৌলতে এসব দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে। খবর বিবিসির
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বেসামাল হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর জেরে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড স্পর্শ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে ওঠে। এই বাস্তবতায় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ ব্যাংক; যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখনো সেভাবে তার ফল ফলেনি। এরই মধ্যে সুদ আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত আশঙ্কা উসকে দিচ্ছে। বিশেষত ফেডের বার্ষিক আর্থিক সম্মেলনে পাওয়েল নিজেই যখন বলেছেন, মূল্যস্ফীতি আগের চেয়ে কমলেও তড়িঘড়ি সুদহার হ্রাস করা অর্থনীতির পক্ষে ভালো হবে না।
আর্থিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ফেড নীতি সুদ বাড়ালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজারে চলে যেতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা যে ক্রমেই মন্দার দিকে যাচ্ছে, পাওয়েলের বক্তব্যে সেই আশঙ্কা স্পষ্ট। এতে সে দেশে চাহিদা কমতে ও বেকারত্ব বাড়তে পারে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আসতে পারে।
এদিকে ফেডের চেয়ারম্যানের সুদহার বৃদ্ধির ইঙ্গিতের পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারসূচকের পতন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ।
জেরোম পাওয়েল চান না, উচ্চ মূল্যস্ফীতির যুগ দীর্ঘমেয়াদি হোক। মানুষ যদি জানে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকবে, তাহলে মানুষের আচরণও সেভাবে বদলে যাবে। যেমন ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে—এটা জানা থাকলে মানুষ হয়তো ৩ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির দাবি করবে।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে উন্নত দেশসহ সবখানেই মানুষ ব্যয় কমিয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে সমাজে অর্থের প্রবাহ আরও কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের বিশ্লেষকেরা ইতিমধ্যে মন্দার আশঙ্কা করছেন। বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি সংকোচন হয়েছে।
এ বছরের মার্চ মাসে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল। এখন তা ২ দশমিক ২৫ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের ঘরে আছে।