বাংলাদেশে অস্থিরতা, চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা: পাকিস্তানের পোশাক খাতে রপ্তানি ২৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ

ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের মতো বিকল্প বাজার খুঁজছেন বিদেশি ক্রেতারা। ছবি: সংগৃহীতভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের মতো বিকল্প বাজার খুঁজছেন বিদেশি ক্রেতারা। ছবি: সংগৃহীতবাংলাদেশে ব্যয় বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চীনের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগে পাকিস্তানের তৈরি পোশাক খাতের পোয়াবারো! পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি বেশি ক্রয়াদেশ পাচ্ছে পাকিস্তানের টেক্সটাইল শিল্প। ফলস্বরূপ, এই শিল্পের রপ্তানি গত আগস্টে ১৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা ২৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা জেএস গ্লোবাল রিসার্চ বিশ্লেষক শাগুফতা ইরশাদ ‘টেক্সটাইলস: রিকভারি ইন কটন অ্যান্ড ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট প্রাইস’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে পাকিস্তানের পোশাক খাতের এই প্রবৃদ্ধির ব্যাখ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিধিনিষেধ—সব মিলিয়ে বৈশ্বিক পোশাক আমদানিকারকেরা বিকল্প বাজার খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা পাকিস্তান, ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে নজর রাখছেন।

শাগুফতা ইরশাদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, উপরোক্ত বিষয়গুলো পাকিস্তানের পোশাক খাতের রপ্তানিতে এই উল্লম্ফনে অবদান রেখেছে। আগস্টে বছরওয়ারি হিসাবে তৈরি পোশাকে রপ্তানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ, আর নিটওয়্যার ও বেডওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ।’

এই পরিবর্তন পাকিস্তানি রপ্তানিকারকদের টেক্সটাইল পণ্যের জন্য, বিশেষ করে নিটওয়্যার এবং গার্মেন্টসের জন্য উচ্চ মূল্য পেতেও সহায়তা করেছে। আগস্টে নিটওয়্যারে তাঁরা গড় দাম পেয়েছেন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি এবং তৈরি পোশাকে ৫৮ শতাংশ বেশি দাম পেয়েছেন তাঁরা।

পাকিস্তানের তালিকাভুক্ত টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর একটি ইন্টারলুপ লিমিটেড (আইএলপি)। পরিবর্তিত পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে এই কোম্পানি। বিশেষ করে নিটওয়্যার (মোজা) রপ্তানিতে তারা এই পরিস্থিতির ব্যাপক সুবিধা নিচ্ছে। সাগুফতা বলেন, উৎপাদন খরচ হ্রাস, রপ্তানিমূল্য পুনরুদ্ধার এবং রপ্তানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এই কোম্পানির প্রান্তিক মুনাফা (প্রফিট মার্জিন) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া, গত জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দামে ২০ শতাংশ সংশোধন, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) ফলন কম হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে তুলার দাম ৮ শতাংশ বৃদ্ধি মিলিয়ে, মার্কিন ডলারের হিসাবে বাড়তি মুনাফা পাকিস্তানের টেক্সটাইল পণ্যের উচ্চ মূল্যকে সমর্থন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছর স্থানীয় তুলার ফলন উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক শিল্পকে আমদানি করা তুলার ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হয়েছে। এটিও আংশিকভাবে রপ্তানিতে মুনাফা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

সাগুফতা ইরশাদ বলেন, পাকিস্তানি টেক্সটাইল শিল্প মালিকেরা ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) তুলা আমদানি ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। কারণ দেশীয় তুলার ফলন কমেছে এবং তুলনামূলকভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম ২০ শতাংশ পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিন্তু তুলার দাম ১৩ শতাংশ কম রয়েছে।

সরকারের ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৮ লাখ বেল (বার্ষিক ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি) লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে, চলতি বছর পাকিস্তানে তুলার উৎপাদন ৬৫ লাখ ৭০ লাখ বেল উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে। সরকার আশা করেছিল এবার তুলার উৎপাদন ৩২ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

স্থানীয় তুলার দাম সম্প্রতি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১৮ হাজার ৪৩৫ রুপি। আর প্রতি পাউন্ড দশমিক ৮৮ মার্কিন ডলার। যেখানে আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক মূল্য (কটন এ সূচক) ২৪ শতাংশ বেড়ে এখন প্রতি পাউন্ড দশমিক ৮৫ ডলারে স্থিতিশীল রয়েছে।

ajker patrika

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here