যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি না

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ

দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে তাঁর বাসভবনে আজিজ আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাদির কল্লোল

প্রথম আলো:যুক্তরাষ্ট্র আপনার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা আপনি কীভাবে দেখছেন।

জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ: সকালে আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর আমি দেখলাম যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের তাদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে আমি অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

প্রথম আলো:যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততার অভিযোগকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে, আপনি আপনার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেছেন। এটা করতে গিয়ে আপনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন।

আজিজ আহমেদ: এ অভিযোগ সত্য নয়। আমার কথা হলো আল-জাজিরা (কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে তথ্যচিত্র প্রচার করেছিল। সেখানে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, এখন যুক্তরাষ্ট্র একই অভিযোগ এনেছে। ফলে এ দুটি একই সূত্রে গাঁথা বলে আমি মনে করি।

প্রথম আলো:যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি অভিযোগ এনেছে যে আপনি অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আপনার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। আপনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।

আজিজ আহমেদ: এ দুটি অভিযোগই আল-জাজিরা প্রচার করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র এখন আনল। আমি সে সময়ও বলেছি এবং এখনো বলছি, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমার যে ভাইয়ের কথা বলা হচ্ছে, সে ২০০২ সালের পর থেকেই বাংলাদেশে নেই। তাকে আমি সরকারি পদ ব্যবহার করে সাহায্য করেছি, বিষয়টা আমি মানতে নারাজ। আর আমার এই ভাই যখন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পায়, তখন সেই চিঠিতে বলা ছিল, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশে মামলা ছিল। সে আওয়ামী যুবলীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার জন্য তাকে ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ওই রাজনৈতিক উদ্দেশে মামলা করার বিষয়টা লেখা ছিল। এটা হয়েছিল আমি সেনাপ্রধান হওয়ার কয়েক মাস পর। আমার আরেক ভাইকে ক্ষমা করা হয়েছিল আমি সেনাপ্রধান হওয়ার আগে। এগুলোর সঙ্গে আমার পদ ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর কোনো বিষয় ছিল না।

প্রথম আলো:কিন্তু আপনি যখন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তখন ঘটনাগুলো ঘটেছে।

আজিজ আহমেদ: না না, আমি সহযোগিতা করিনি। আমি সেনাপ্রধান হওয়ার অনেক আগে এগুলোর প্রক্রিয়া হয়েছে। অভিযোগ তো অনেক কিছু করা যেতে পারে। কিন্তু সেই অভিযোগের কোনো ভিত্তি বা প্রমাণ নেই। কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

প্রথম আলো :

আপনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে এবং এর আগে বিজিবির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু আপনাকে ঘিরে কেন এমন বিতর্ক সৃষ্টি হলো।

আজিজ আহমেদ: দেখেন, এই বিতর্ক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এটা ব্যক্তি হিসেবে আমাকে বিতর্কিত করার জন্য করা হয়েছে।

প্রথম আলো:তা হলে এ ধরনের অভিযোগ বা বিতর্ক আপনাকে ঘিরে কেন এল?

আজিজ আহমেদ: কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। তবে হতে পারে আমি দুইটা সময় দুইটা বাহিনীর প্রধান ছিলাম। একটা হলো আমি ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনসহ দেশে অনেক কিছু হয়েছে। এরপর ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। তখন দেশে করোনাভাইরাস মহামারি এবং নির্বাচন হলো। এ বিষয়গুলোও কারণ হতে পারে।

প্রথম আলো:এখানে নৈতিকতার একটা প্রশ্ন আসে কি না যে এ ধরনের অভিযোগের মুখে আপনাকে পড়তে হয়েছে। এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা এল আপনার ওপর।

আজিজ আহমেদ: না, এখানে নৈতিক দায় আমি কেন নেব। এখন কেউ যদি আমাকে পছন্দ না করে কোনো অভিযোগ আনে, তার দায় আমি কেন নেব।

প্রথম আলো:আপনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তি হিসেবে আপনার ওপর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা সরকারকেও বিব্রত করে কি না।

আজিজ আহমেদ: আমি কারও দিকে বিষয়টা নিতে চাই না। তবে সরকার যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সময় আমাকে দুটি বাহিনীতে নিয়োগ করেছিল। ফলে হয়তো সরকারকেও বিব্রত করে বা কিছুটা হেয় করে। কোনো প্রমাণ ছাড়া যখন আমাকে নিয়ে এমন অভিযোগ এনেছে, সেটা হয়তো–বা সরকারকে বিব্রত করে।

prothom alo