- ২৪ ডেস্ক
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালা হচ্ছে, যার সুবিধাভোগী দেশের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে। নিউইয়র্কে সোমবার এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘তারা সুসংগঠিত—এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়। সামনের কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যা বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি।’ এবারের নির্বাচনে নারীদের ভোটদানে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে উল্লেখ করে তিনি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সোমবার নিউইয়র্কের একটি হোটেলে রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি কেরি কেনেডির নেতৃত্বে একটি শীর্ষ মানবাধিকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠকে তিনি মানবাধিকার কর্মীদের আরও ঘন ঘন বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাদের নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করা। প্রত্যেকবার আপনারা এলে ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো নতুন করে আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত আপনারাই জনগণের কণ্ঠস্বর।’
বৈঠকে তিনি চলমান সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস জানান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও এই প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারগুলো অক্টোবরের মধ্যে খসড়া আকারে তৈরি হবে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং মানুষ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে আসছে। তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষকে আয়না ঘরে রাখা হয়েছিল, অনেক সময় তারা জানতও না কেন সেখানে রাখা হয়েছে।’ এর আগে গত বছরের হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বৈঠকে অর্থ পাচার প্রতিরোধে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্ব দেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। আমি আশা করি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিষয়ে আওয়াজ তুলবে, যেন কোনো ব্যাংক এমন অর্থ লুকিয়ে রাখতে না পারে। এটি সত্যিকার অর্থেই জনগণের অর্থ।’
বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা কাঠামোগত সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছে। অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার আইনজীবী ক্যাথরিন কুপার, সিভিকাসের সাধারণ সম্পাদক মনদীপ তিওয়ানা, ফোর্টিফাই রাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রাশিদ দিয়া, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ক্যারোলিন ন্যাশ, ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং আন্তর্জাতিক পণ্ডিত মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান এবং সিভিকাসের জাতিসংঘ উপদেষ্টা জেসেলিনা রানা।